চ্যাম্পিয়ন রংপুরকে সহজেই হারাল সিলেট

শুরুতেই তরুণ পেসার মেহেদি হাসান রানা কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন রংপুর রাইডার্সকে। মাঝে মোহাম্মদ মিঠুন ও রিলে রুশোর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রুশো আউট হওয়ার পর আর লড়তে পারেনি রংপুর।

সিলেট সিক্সার্সের কাছে হেরে গিয়েছে ২৭ রানের ব্যবধানে। স্থানীয় দল সিলেটের করা ১৮৭ রানের জবাবে রংপুরের ইনিংস থেমেছে ১৬০ রানে। সিলেটের পক্ষে বল হাতে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদি রানা এবং তাসকিন আহমেদ। ৩২ বলে ৫৮ রানের ঝড় তুলেও দলকে জেতাতে পারেননি রিলে রুশো।

১৮৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা একদমই মনমতো করতে পারেনি রংপুর। সোহেল তানভীরের করা প্রথম ওভার কোনোভাবে সামাল দিলেও, দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন ২২ বছর বয়সী মেহেদি রানা। ওভারের তৃতীয় বলে মেহেদি মারুফকে ফেরানোর পরে, শেষ বলে তিনি সাজঘরের পথ দেখান ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলস।

মেহেদি মারুফ ৫ বলে ৩ রান করলেও রানের খাতা খুলতেই ব্যর্থ হন হেলস। তৃতীয় ওভারে ‘বিগ ফিশ’ ক্রিস গেইলকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন সোহেল তানভীর। ৭ বল খেলে ১ চারের মারে ৭ করেন গেইল।

রংপুরের স্কোর তখন ২.৩ ওভারে ১১ রানে ৩ উইকেট। এরপরই পাল্টা আক্রমণ চালান রিলে রুশো এবং মোহাম্মদ মিঠুন। দুজনের ৫৫ বলে ৮৯ রানের জুটিতে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন রুশোই। আসরে নিজের তৃতীয় ফিফটি করে রুশো সাজঘরে ফেরেন দলীয় ১০০ রানের মাথায়। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কার মারে মাত্র ৩২ বলে এ রান করেন তিনি।

রুশো ফিরে যাওয়ার পরই কার্যত শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। তবে অধিনায়ম মাশরাফি মর্তুজার সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুন লড়াই চালিয়ে যান কিছুক্ষণ। ২৯ বলে ৩৫ রান করে আউট হয়ে যান মিঠুন। ষষ্ঠ উইকেটে বেনি হাওয়েলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মাশরাফি। ১৭তম ওভারে হাওয়েল ১৩ রান করে ফিরে গেলে ভেঙে যায় সে জুটিও।

শেষপর্যন্ত একাই উইকেটে টিকে থাকেন অধিনায়ক মাশরাফি। একপ্রান্তে ২৭ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত থেকে দেখেন নিজ দলের ২৭ রানের পরাজয়। ষষ্ঠ ম্যাচে রংপুরের চতুর্থ পরাজয় এটি। অন্যদিকে পঞ্চম ম্যাচে দ্বিতীয় জয় সিলেটের।

টসের সময় সিলেট সিক্সার্স অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার জানিয়েছিলেন তারা ইতিবাচক ব্যাটিং করতে চান। আগেরদিন মাত্র ৬৮ রানে অলআউট হওয়ার পর ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের বেশি কিছু চাওয়ার ছিলো না সিলেট অধিনায়কের।

সে ইতিবাচক ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই বাজি খেলেন ওয়ার্নার। নিজে না নেমে লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠান সাব্বির রহমানকে। সে বাজি কাজে লেগেছে ঠিকঠাক। সাব্বির রান না পেলেও, লিটন ও ওয়ার্নারের ঝড়ো ফিফটিতে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ১৮৭ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়েছে সিলেট। জয়ের ধারায় ফিরতে ১৮৮ রান করতে হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।

টসে হেরে সাব্বির রহমানকে সাথে নিয়ে ব্যাট করতে নামেন লিটন কুমার দাস। দুজনের জুটিতে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৬১ রান করে সিলেট। যার সিংহভাগই আসে লিটনের ব্যাট থেকে।

রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজার করা প্রথম ওভারে মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মারেন লিটন। মাশরাফির পরের ওভারে মারেন আরো দুইটি। প্রতি ওভারেই অন্তত একটি করে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানরেটটা সবসময়ই উপরের দিকেই রাখছিলেন তিনি।

পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে সোহাগ গাজীর করা ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে পাওয়ার প্লে’র দারুণ ফায়দা নেন লিটন। দলের রান তখন ৬১, যেখানে লিটনের সংগ্রহ ২২ বলে ৪৫ রান।

তবে এরপর খানিক স্লো হয়ে যান লিটন। যে কারণে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছতে ২৯ বল খরচ হয়ে যায়। ফিফটি করেও দমে যাননি লিটন। ৭৩ রানের মাথায় সাব্বির রহমান ২০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান।

পরে দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়েন তিনি। খেলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৭০ রানের ইনিংস। ১৫তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসেন ক্রিস গেইল। তিনি বল হাতে নিয়েই ওভারের তৃতীয় বলে ভাঙেন লিটন-ওয়ার্নার জুটি।

তবে এতে গেইলের কৃতিত্বের চেয়ে লিটনের গাফেলতিই বেশি। কেননা সহজ রান হবে ভেবে ধীরে দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সে সুযোগে বল পেয়েই চোখের পলকে স্টাম্প ভেঙে লিটনকে রানআউট করে দেন গেইল। আউট হওয়ার আগে ৯ চার ও ১ ছক্কার মারে মাত্র ৪৩ বলে ৭০ রান করেন তিনি।

লিটন আউট হয়ে গেলেও দলকে বড় সংগ্রহের দারুণ এক ভীত দিয়ে যান। যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার এবং নিকলান পুরান। মাত্র ২১ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। ১৬ বলে ২৬ রান করে ১৮তম ওভারের শেষ বলে আউট হন পুরান।

১৯তম ওভারে সাহসী সিদ্ধান্তে আবারো গেইলকে বোলিং দেন মাশরাফি। প্রথম তিন বলে মাত্র ২ রান দিয়ে সে বাজি জেতার পথেই ছিলেন রংপুর অধিনায়ক। কিন্তু তখন মাশরাফির ট্রাম্পকে ‘ওভারট্রাম্প’ করেন সিলেট অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার।

স্বভাবত বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হলেও গেইলের অফস্পিন সামাল দেয়ার জন্য পুরোপুরি ডানহাতি ব্যাটসম্যান বনে যান ওয়ার্নার। ডান হাতে ব্যাট করতে প্রথম বলেই সোজা গেইলের মাথার ওপর দিয়ে মারেন বিশাল ছক্কা। পূরণ করেন আসরে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। পরের দুই বলে ফাইন লেগ ও থার্ড ম্যান দিয়ে চার মেরে শেষ তিন বলে ১৪ রান নিয়ে নেন ওয়ার্নার।

শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে নিজের রানের খাতা খোলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। তবে এক বল পরই তাকে বোল্ড করে দেন শফিউল। শেষপর্যন্ত ৬ চার ও ২ ছক্কার মারে ৩৬ বলে ৬১ রান করেও অপরাজিত থাকেন ওয়ার্নার। সিলেট থামে ৫ উইকেটে ১৮৭ রানে।