ছাত্রজীবনে কীভাবে নেবেন চাকরি প্রস্তুতি

এদেশে কে না জানে, চাকরির বাজার ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ঠিক কখন থেকে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা উচিত? অনেকে বলেন লেখাপড়া শেষে। অনেকে আবার ছাত্রজীবন থেকেই প্রস্তুতি শুরুর পক্ষপাতী। এঁদের যুক্তি, এতে বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়। কথাটা একেবারে ভুল নয়, আবার পুরোপুরি সঠিকও নয়। জীবিকার ‘গ্যারান্টি’ অর্জনের এ রেসে আগে প্রস্তুতি শুরু করলে কিছু লাভ তো আছে বৈকি। তবে ছাত্রাবস্থায় চাকরি খোঁজা কিংবা প্রস্তুতি নেওয়ার নেপথ্য কারণ হওয়া উচিত এগুলো-

১. হাতখরচ নির্বাহের জন্য নয়, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ন্যূনতম পার্টটাইম চাকরি করুন। লেখাপড়া শেষে কাজে দেবে।

২. ছাত্রজীবনে ছোট কিংবা বড় যেকোনো ধরনের কর্মক্ষেত্রে পদার্পণের পর খুব ভালো করে খেয়াল করবেন, আপনার সিনিয়র সহকর্মীরা কীভাবে অফিস সামলাচ্ছেন। তাঁদের কাছ থেকে এ দক্ষতা শিখতে পারলে ভবিষ্যতে এ অভিজ্ঞতার মূল্য হবে অসামান্য। মনে রাখবেন, কর্ম মানেই অভিজ্ঞতা, আর অভিজ্ঞতা হলো জীবনের পরবর্তী ধাপের পুঁজি।

৩. দায়িত্ব নেওয়া শিখতে হবে। অফিসে সবাই দায়িত্ব নিতে পারে না। স্নাতক করাকালীন কোনো অফিসে এ অভিজ্ঞতাটুকু আপনাকে ভবিষ্যতে বড় পদ গ্রহণে ভীষণ সহায়তা করবে।

৪. অফিস মানেই ‘টিমওয়ার্ক’। কোনো দলের সঙ্গে কাজ করলে খুব অল্প বয়সেই পরিণত হওয়ার পথ খুলে যায়। এটি হতে পারে গ্র্যাজুয়েশনের শুরুতেই। এ সময় কোনো দলের সঙ্গে পার্টটাইম চাকরি আপনাকে নিয়ে যাবে পরিণত জীবনের প্রথম ধাপে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করাকালীন কিন্তু আপনি চাইলেই চাকরি পাবেন না। এ জন্য দরকার বুঝেশুনে প্রস্তুতি। পড়াশোনা এবং সমসাময়িক বিশ্ব সমন্ধে খোঁজ‍খবর রাখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, জীবনে লেখাপড়ার বিকল্প কিছু হতে পারে না। চাকরির ক্ষেত্রে তো নয়ই, সেটা হোক সরকারি কিংবা বেসরকারি। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি। বর্তমান দুনিয়াই তথ্যপ্রযুক্তির, তাই এ ব্যাপারে যত বেশি জানবেন ততই এগিয়ে যাবেন চাকরির দুয়ারের কাছাকাছি। তবে ছাত্রজীবনে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে চাকরি নামক সোনার হরিণ আপনাকে অপেক্ষায় রাখতে পারবে না খুব বেশি দিন। কৌশলগুলো নিম্নরূপ-

দক্ষতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করুন
যেকোনো কাজে সবার আগে নিজেকে বোঝা জরুরি। সেখানে চাকরি খোঁজার প্রস্তুতিতে তো ব্যাপারটি আবশ্যক। কাজ খোঁজার আগে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি কোন কোন ব্যাপারে দক্ষ—সবার আগে সেসব জায়গা চিহ্নিত করুন। এরপর সে অনুযায়ী চাকরি খুঁজুন। যদি লেখার হাত কিংবা জানাশোনা ও ‘কমন সেন্স’ ভালো হয় তাহলে গণমাধ্যম, আবার হিসাবনিকাশে ভালো জানাশোনা থাকলে যোগ দিতে পারেন কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। মনে রাখবেন, জীবনের প্রতিটি দক্ষতাই একেকটি গুণ, যা চাকরিজীবনে কাজে লাগবেই।

পড়াশোনাই চাবিকাঠি
ধরে নেওয়া যাক, অঙ্কে আপনার মাথা খোলে। এ কারণে অঙ্ক নিয়ে খুব বেশি চর্চার প্রয়োজন মনে করছেন না। এটা মারাত্মক ভুল। কারণ, চর্চা ছাড়া যেকোনো দক্ষতাই মরে যায়। এ কারণে ছাত্রজীবনের সদ্ব্যবহার করুন মানে, পড়াশোনা করুন। একমাত্র ভালো জানাশোনাই আপনার অদক্ষতার জায়গাগুলোকে পেছনে ফেলে ছাত্রজীবনে একটা ভালো চাকরি এনে দিতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ছাত্রজীবনে যখন আপনি চাকরির জন্য কোনো ভাইভা দেবেন, তখন নিয়োগ কর্তৃপক্ষ কিন্তু শুধু আপনার পড়াশোনার জায়গাগুলোই খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবে। কারণ ছাত্রজীবনে ওটাই আপনার একমাত্র দায়িত্ব। নিয়োগ কর্তৃপক্ষ যদি বুঝতে পারে, এ দায়িত্বটুকু আপনি ভালোভাবে পালন করেননি, তাহলে অফিসের কাজে আপনার ওপর আস্থা রাখবে কীভাবে?

চাই মানসম্মত জীবনবৃত্তান্ত
একজন চাকরিপ্রার্থীর গুণপনার প্রতিচ্ছবি হলো তাঁর জীবনবৃত্তান্ত। যেখানে আপনি নিজেকে তুলে ধরতে পারেন উজ্জ্বলভাবে। ছাত্রজীবনেই আপনি কী কী দক্ষতা অর্জন করেছেন, তার সুগঠিত কিন্তু পরিমিত বিবরণ নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে আপনার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে। জীবনবৃত্তান্ত বাংলা কিংবা ইংরেজি, যে ভাষাতেই হোক না কেন শব্দের ব্যতিক্রমী ব্যবহার আপনাকে আলাদা করে তুলবে বাকিদের চেয়ে।

থাকুক সহপাঠ্য কর্মকাণ্ড
ছাত্রজীবন কিন্তু শুধুই গৎবাঁধা পড়াশোনার নয়, এ জীবন বাঁধহারা, উদ্দাম স্বাধীনতার। মানে, পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি চাইলে যেকোনো সৃজনশীল কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। সেটা হতে পারে সমাজসেবা, লেখালেখি, স্বেচ্ছাসেবী, বিতর্ক কিংবা খেলাধুলা। এসব কর্মকাণ্ড নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে আপনার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে। কাজের ব্যাপারেও অনেক সুবিধা পাবেন এসব অভিজ্ঞতা থেকে।