ছাত্রদের টাকায় কারা চড়ে চবি’র শাটলে?

সাফাত জামিল শুভ : ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিকট নিত্যসঙ্গী হিসেবে চির পরিচিতি পায় শাটল ট্রেন। শাটলে মিশে আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের ইতিহাস।

শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বাস সার্ভিস না থাকায় এই শাটলের উপরই নির্ভর করতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে পরিবহন সংকট চবি’র একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। কিন্তু এ সংকট দিন দিন প্রকট আকার ধারন করেছে।সকাল ৭:৩০টা থেকে রাত ৯:৩০টা পর্যন্ত এ রুটে মোট ১৮ বার চলাচল করে শাটল ও ডেমু ট্রেন। প্রতিবারে ২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বহন করে থাকে এই শাটল ট্রেন।

কোন নোটিশ বা কারণ ছাড়াই হঠাৎ বগির সংখ্যা কমিয়ে ফেলা, অপ্রোয়জনীয় মালবাহী বগি সংযুক্ত করা, বহিরাগতদের অনাকাঙ্ক্ষিত উৎপাতে চবি’র গর্বের শাটলের এখন ‘নাজেহাল’ অবস্থা দৃশ্যমান । টানা বৃষ্টি কিংবা তীব্র গরমের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা শহরে যাতায়াতের জন্য দূরত্বের কারণে অনেকটা নিরুপায় হয়েই শাটলে উঠতে বাধ্য হয়। ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাবার পথে প্রায় প্রতিটা শিক্ষার্থীর চোখে বিরক্তির ছাপ লক্ষ্যণীয়।

শাটল ট্রেন ভিত্তিক রাজনীতি তো আগেই বন্ধ হয়েছে, তবু এত বিরক্তি কেন? অনুসন্ধানে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, -সিট না পাওয়া, দাঁড়ানোর জায়গার স্বল্পতা, অপরিচ্ছন্ন বগি, বহিরাগতদের মালামাল পরিবহন ইত্যাদি কারণে চবি’র অনেক শিক্ষার্থীই বিকল্প হিসেবে বাসে বা সিএনজি’তে যাতায়াত করেন। প্রায়ই দেখা যায়, বগির মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা,মল-মূত্র, কিছু বগির সিটে ঘুমিয়ে আছে নেশাগ্রস্ত বখাটেরা। রাত ৮;৪৫ এর ট্রেনে বহিরাগতদের ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অসহায় হয়ে পড়েন।মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাইসহ ছাত্রীদের বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় প্রায়শই। শাটলে ভ্রমণে বহিরাগতদের জন্য কার্যত দৃশ্যমান কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ ব্যাপারটি সহজেই অনুমেয়। তাছাড়া শাটল চলাচলের সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কোন তৎপরতাও চোখে পড়েনা।

উদ্বেগজনক যে, শাটল ট্রেনে বহিরাগত বা যেকোনো অনিয়ম ঠেকাতে “কে” কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে, এ ব্যাপারটিই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কেউই। অভিযোগের দায় এককভাবে নিতে রাজি নয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কিংবা জিআরপি পুলিশ।

উল্লেখ্য, শাটল ট্রেন কিংবা ডেমুতে চলাচলের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কোনো টিকিট কাটতে হয় না। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করায় প্রতিদিন আর ভাড়াও দিতে হয় না। এই সুযোগ নিয়ে বহিরাগতরাও ভাড়া ছাড়াই চলাচল করছেন। তাতে ভোগান্তি বেড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে, শাটল ট্রেনে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীদের বছরে প্রায় ছয় শ টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে দুটি ট্রেন বাবদ প্রতি মাসে ছয় লাখ টাকা দিয়ে আসছে। তবে ডেমু ট্রেনটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলাচল করায় রেলওয়েকে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না।