ছাত্রলীগের এশাকে লাঞ্ছনাকারী ২৫ শিক্ষার্থীকে শোকজ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশা ও সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ২৫ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত মঙ্গলবার থেকে হল কার্যালয়ে ছাত্রীদের ডেকে এনে এই নোটিশ দেওয়া হয়। এই নোটিশের উত্তর ছাত্রীদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাদের হয়রানি করা হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘গত ১০ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাতে আপনি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অসত্য রটনা ও গুজব ছড়িয়েছেন যে, উক্ত হলের আবাসিক ছাত্রী ইফফাত জাহান এশা, মোর্শেদা আক্তার নামে এক ছাত্রীর রগ কেটে দিয়েছেন এবং তাকে মারধর করেছেন। আপনি অন্যান্য আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করেছেন ও তার আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার এ ধরনের পূর্বপরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা হলের ছাত্রীদের ভীষণভাবে উত্তেজিত ও আতঙ্কিত করে। তা ছাড়া আপনি পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে সংঘবদ্ধ হয়ে ইফফাত জাহান এশাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন এবং জোরপূর্বক ইফফাত জাহান এশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং তার বস্ত্রহরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংঘটিত উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে আপনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও আইনের সুস্পষ্ট পরিপন্থী।’

নোটিশ পাওয়া একাধিক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা হল ছাত্রলীগ সভাপতি এশার লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তারপরও তালিকায় আমাদের নাম দেওয়া হয়েছে। হল থেকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সেটার উত্তর দিয়েছি। এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা নতুন করে হয়রানির আশঙ্কা করছি।’

নোটিশ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সেমিস্টার পরীক্ষা চলছে বলেও জানা যায়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তাদের বক্তব্য জানার জন্য এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কোনো হয়রানি করা হবে না। তারা যদি মনে করে হয়রানি করা হচ্ছে, তাহলে তাদের অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

গত ১০ এপ্রিল রাতে সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি ইফফাত জাহান এশার হাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোর্শেদা খানমের পায়ের রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এশাকে হেনস্তা করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পেয়ে ছাত্রলীগ থেকে এশাকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এশাকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু পরে অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।