ছাত্রলীগ নেতাকে বিবাহিত প্রমাণে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভুয়া’ কাবিননামা

যশোর জেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি রওশন ইকবাল শাহীকে বিবাহিত প্রমাণ করার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভুয়া কবিননামা জমা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে যশোরের একজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বিবাহিত ছাত্রনেতাদের সংগঠনের পদ ছেড়ে দিতে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই কাবিননামা জমা পড়ে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গত সোমবার যশোর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন। দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন রওশন ইকবাল শাহী এবং সাধারণ সম্পাদক হন ছালছাবিল আহমেদ জিসান।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহাকারী সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী, বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের উপস্থিতিতে যশোর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে ভোট নেওয়া হয়।
সভাপতি পদে রওশন ইকবাল শাহী পান ১০৪ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাব্বির রহমান লিমন পান ১৬ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে ছালছাবিল আহমেদ জিসান পান ১০৫ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৌফিকুর রহমান পিয়াস পান ১৫ ভোট। এরপর নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ।

সম্মেলনস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবাল শাহীর নামে সম্মেলনের দিন কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। এমনকি ভোট নেওয়ার আগেও সম্মেলনস্থলে দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় কারো নামে কোনো অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্য। ওই সময়ও কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি।

যশোরের সম্মেলনের এক দিন পর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসে, বিবাহিত কোনো নেতা সংগঠনে থাকতে পারবেন না। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের বিবাহিত নেতাকর্মীদের পদত্যাগের জন্য পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। মূলত এরপর একটি গ্রুপ সরব হয়ে ওঠে।

যশোরের একজন প্রভাবশালী নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে যশোর ছাত্রলীগের সভাপতির বিয়ের একটি কাবিননামার অনুলিপি জমা দেন। এরপর শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি তদন্ত করতে দায়িত্ব দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কাজী এনায়েতকে। তদন্ত শেষে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তিনি।

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী এনায়েত বলেন, ‘যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নামে যে কাবিননামাটি জমা দেওয়া হয়েছে সেটি ভুয়া। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। তদন্ত রিপোর্ট সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছি।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া কাবিননামায় দেখানো হয়েছে, যশোর সদরের ১২ নম্বর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের নিকাহ রেজিস্ট্রার আখতার হোসেন বিয়েটি পড়িয়েছেন। তথ্যটি যাচাই-বাছাই শুরু হলে আখতার হোসেন বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে লিখিত চিঠি পাঠান যশোর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। চিঠিতে তিনি বলন, রওশন ইকবাল শাহীর ‘বিবাহ সম্পাদনের কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই’।
ফতেহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জসীম উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে তথ্য চান যশোর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ ঘোষ। তদন্ত শেষে তিনি যে প্রতিবেদন তৈরি করেন, তাতে উল্লেখ করেন, ছাত্রলীগ সভাপতি শাহীর বিয়ের কোনো তথ্য-প্রমাণ ফতেহপুর কাজী অফিসে নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রতিবেদনের অনুলিপি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসাইন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বলেন, ‘যশোর ছাত্রলীগের সভাপতির নামে বিয়ের যে কাবিননামাটি আমাদের হাতে এসেছিল, সেটি আসলে ভুয়া। বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। রওশন ইকবাল শাহী অবিবাহিত।’

যার সঙ্গে শাহীর বিয়ে হয়েছে বলে কাবিননামা দেয়া হয়, তার বাবা এহসানুল কবির সাগরও মেয়ের বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। তিনি তার মেয়ের সঙ্গে শাহীর বিয়েসংক্রান্ত খবরকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। আজ শনিবার যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে এহসানুল কবির বলেন, ‘স্থানীয় পত্রিকায় এ ধরনের খবর প্রকাশের পর কিছু লোক আমার বাড়ি যাচ্ছে। এটি আমার ও মেয়ের মান-সম্মানের ব্যাপার। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার আশা করছি।’