ছিনতাই করতে গিয়ে জাবির তিন শিক্ষার্থী আটক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কর্মচারীর জামাতাকে তুলে নিয়ে ছিনতাই, মারধর ও মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী হাতেনাতে আটক হয়েছেন। আটককৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের মো. রায়হান পাটোয়ারী, একই ব্যাচের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মো. আল রাজী, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সঞ্জয় ঘোষ। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শাহ মোস্তাক আহমেদ সৈকত ও দর্শন বিভাগের মোকাররম হোসেন শিবলু।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস সুত্রে জানা যায়, আজ শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আটকৃতরাসহ মোট পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল এলাকার যাত্রীছাউনির নিচে থেকে বাসচালক মো. আলমগীর হোসেনের জামাতা মনির সরদারকে জোরপূর্বক একটি অটোরিকশায় তুলে নেয়। আটোরিকশায় করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন পানির পাম্পের কাছে নিয়ে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে যখম করে এবং তার কাছে থাকা মূলবান জিনিসপত্র ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীরা মনির সরদারকে জোর করে ইয়াবা কারবারি বানানোর চেষ্টা করেন এবং বাসায় ফোন দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। খবর পেয়ে মনিরের শ্বশুর বাড়ির লোকজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী ঘটনাস্থলে যান। এ সময় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে দুজন পালিয়ে গেলেও তিনজনকে আটক করে গণধোলাই দেয় তারা।

পরে প্রক্টোরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা আহত মনিরসহ ছিনতাইকারীদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করেন। মনির সরদারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এদিকে প্রক্টর অফিসে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা তিনজন ছিনতাই, মারধর ও মুক্তিপন দাবির কথা স্বীকার করেছেন।

হল সূত্রে জানা গেছে, আটকৃতদের মধ্যে রায়হান পাটোয়ারীকে এর আগে ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই বছরের বহিষ্কারাদেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেও সে এখন ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় হলে থাকে এবং সঞ্জয় ঘোষ ও আল রাজী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা রাজনীতি করে বলে দাবি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগীর আত্মীয়-স্বজন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী (চালক) মো. আলমগীর হোসেনের জামাতা মো. মনির সরদার বিশমাইলে তার শ্বশুর বাড়িতে আসেন। আজ শনিবার ভোরে তিনি ঢাকায় চাকরিস্থলে যোগদানের জন্য বিশমাইল এলাকায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়।

মনির সরদার বলেন, ভোরে ফার্মগেটে যাওয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে রওনা দিই। বিশমাইলে আবাসিক এলাকায় যাত্রীছাউনির নিচে আমাকে আটক করে। তারা আমাকে মাদক কারবারি বানানোর চেষ্টা করে এবং এটা আমাকে স্বীকার করতে বলে। এরপর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী মারধর করে। তারা আমার কাছে থাকা টাকা, ফোন, মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে নেয়।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদে ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তার সবটাই নেব। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করছি। আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় আগামীকাল জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অভিযুক্তদের লিখিত ভাষ্য নিয়েছি। অভিযোগকারীদের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।