ছেলেকে মানুষ করতে মৃত্যুকূপে লড়ছেন মা

পাঁচ বছরের ছেলেকে মানুষ করতে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকূপে মোটরসাইকেলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এক মা। ভারতের রাঁচির জগন্নাথপুরে মেলা শুরু হয়েছে। মেলায় এই ‘মা’ রেহানাকে দেখার জন্যই প্রচুর ভিড় জমছে।

যে খেলায় পুরুষদেরই আধিপত্য সেই বিপজ্জনক খেলা দেখিয়ে হাততালি পাচ্ছেন রেহানা। কিন্তু তার এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজের আড়ালে রয়েছে ছেলেকে মানুষ করার দৃঢ় প্রত্যয়। রেহানা বলেন, এই ‘স্টান্ট’ শুধুমাত্র তার ছেলে রেহানের জন্যই।

রাঁচির জগন্নাথপুরে শতাব্দী প্রাচীন মেলায় তিনটি মরণকূপ বসানো হয়েছে। কিন্তু মেলায় যত ভিড় ওই ‘মৃত্যুকূপ’কে ঘিরেই। ৩০ ফুটের গভীর কূপের দেয়াল ঘিরে রেহানার স্টান্টবাজি দেখে হাততালির ঝড় বইছে। কূপ ঘিরে মাচার মতো একটা জায়গায় মই দিয়ে উঠে দর্শকদের খেলা দেখতে হয়।

রেহেনার খেলা দেখতে এতটাই ভিড় হচ্ছে যে মাচা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছে মেলা কর্তৃপক্ষ। ফলে নামতে হয়েছে পুলিশকে। দর্শক সামলাচ্ছেন তারাই। এক সঙ্গে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি দর্শককে পুলিশ ঢুকতে দিচ্ছে না। খেলা দেখান মৃত্যুকূপে, কিন্তু রেহানার মন পড়ে থাকে নয়াদিল্লির সন্তনগরে।

সেখানেই দাদা-দাদির কাছে থাকে তার পাঁচ বছরের ছেলে রেহান। দু’টি শোয়ের মাঝে রেহানা জানান, ‘ছেলেকে মানুষ করার জন্য মায়েরা তো কত কিছুই করে। আমি এই বিপজ্জনক খেলা দেখাচ্ছি। উপার্জন করছি।’ ছেলের মুখ মনে পড়লে কোনো বিপদকেই আর বিপদ বলে মনে হয় না রেহানার।

দিল্লির সন্তনগরের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রেহানা একটু বড় হতেই এক পড়শির মোটরবাইকে বাইক চালানো শিখেছিলেন। রেহানা বলেন, ‘বন্ধুর বাইক নিয়ে টোটো করে ঘুরে বেড়াতাম। একবার আমাদের পাড়ায় এ রকম মৃত্যুকূপের খেলা বসেছিল। আমি ঠিক করলাম ওই খেলা আমিও দেখাব।’

খেলার আয়োজক কর্মী রিয়াজ বলেন, ‘প্রথমে আমরা ওকে নিতে রাজি হইনি। ছেলেদের এই খেলা মেয়েরা কীভাবে দেখাবে! কিন্তু ওর জেদ দেখে নিয়ে নিলাম। এখন রেহানা পুরুষ স্টান্টবাজদের পেছনে ফেলে দিয়েছে।’

এই রিয়াজকেই পরে বিয়ে করেন রেহানা। রেহানার কথায়, ‘আমি বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারিনি। কিন্তু ছেলেকে ভাল ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে পড়াচ্ছি।’ ছেলেকে নিয়ে মায়ের স্বপ্ন অনেক। সেই স্বপ্নের কাছে এই ৩০ ফুটের মৃত্যুকূপ তো কিছুই নয়!

সূত্র : আনন্দবাজার।