ছেলে হত্যার বিচার পেতে সপরিবারে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ!

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বৃদ্ধ পিতা। কিন্তু কার কাছে কোনো প্রতিকার পায়নি। না পুলিশের কাছে, না স্বজাতির লোকদের কাছে। অবশেষে প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে ছেলে হত্যার বিচার পেতে সপরিবারে মুসলমান ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলেন আখতার আলির পরিবার।

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাগপতের বরারখা জেলার বাসিন্দা আখতার (৬৮)। মাসখানেক আগে তার ২৮ বছর বয়সী ছেলে গুলহাসানের ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

পরিবারের অভিযোগ, ছেলেকে খুন করা হয়েছে। পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগও করেন আখতার। কিন্তু পুলিশ খুনের অভিযোগ না নিয়ে সেটাকে স্রেফ আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মামলা দায়ের করে। প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলেন আখতার। শেষমেশ ছেলের হত্যার সুবিচার পেতে তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রী এবং দুই নাতি ও চার নাতনিকে নিয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন আখতার।

বাগপতের জেলা প্রশাসক ঋষিরেন্দ্র কুমার বলেন, পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে আখতার ও তার পরিবার ধর্ম পরিবর্তন করেছেন।

মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) রীতিমতো যজ্ঞ করে ধর্ম পরিবর্তনের আয়োজন করে যুব হিন্দু বাহিনী। রাজ্যের যুব হিন্দু বাহিনী (ভারত)-র প্রধান সৌখেন্দ্র খোখার বলেন, হিন্দু রীতিনীতি মেনেই নাম পরিবর্তন করেছেন আখতারের পরিবার। যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, খুনের প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়ে পুলিশ সেটা আত্মহত্যা বলে মামলা দায়ের করায় আখতার প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, স্বধর্মের লোকদের কাছে সাহায্যের আশায় ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয় তাকে। কেউই তার পাশে দাঁড়াতে চাননি। একদিকে পুলিশের ভূমিকা, আর অন্যদিকে স্বধর্মী লোকেদের আচরণ— এই দুই কারণে আখতার প্রচণ্ড অসহায় হয়ে পড়েন। আর এই কারণেই ধর্ম পরিবর্তন করেন তিনি ও তার পরিবার।

ধর্ম পরিবর্তনের পর আখতারের নাম এখন ধরম সিং রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, গত ২৮ জুলাই বাগপতের নেভাদা গ্রামে আমার ২৮ বছরের ছেলে গুলহাসানকে হত্যা করে এটিকে আত্মহত্যা দেখাতে তার মৃতদেহ ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আমি অনেকবার পুলিশের কাছে গিয়েছি, আমার সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে ছেলের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার আর্জি জানিয়েছি, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।

আখতার ওরফে ধরম সিং আরো বলেন, পরে একটি মুসলিম পঞ্চায়েতে আমাদের সাহায্যের পরিবর্তে অপমান করা হয়। আমাদের সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনও সহায়তা না পাওয়ায় আমরা ধর্ম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা এখন সুবিচার পাওয়ার আশা করছি।

এদিকে এই ঘটনা সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গেছে। বাগপতের জেলাশাসক ঋষিরেন্দ্র কুমার বলেছেন, জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সূত্র: খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার।