জনগণের নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া

মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাই জনগণের নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছে সরকার। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৩ কোটি ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৫০ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। অর্থমন্ত্রী তাতে স্বাক্ষরও করেছেন। বরাদ্দে অর্থমন্ত্রীর স্বাক্ষরের বিষয়টি অর্থমন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজার সদর, উখিয়া, টেকনাফ ও রামুতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা স্থানীয়দের ওপর হামলা এবং মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রধান, শরণার্থী সেল) মোহাম্মদ হাবিবুল কবীর চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা যেন বাইরে মুভ করতে না পারে সেজন্য কাঁটাতারের বেস্টনি দেয়া হবে।

জানা গেছে, গত শনিবার কক্সবাজারের খুনিয়াপালং ইউনিয়নে আবদুল জব্বার নামে স্থানীয় এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার বালুখালী-২ ক্যাম্পে শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গাদের হামলায় আহত হয় টিউবওয়েল বসানোর কাজে নিয়োজিত চার শ্রমিক। মসজিদের মাইকে ডাকাত বলে ঘোষণা দিয়ে এ হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর দুই রোহিঙ্গাকে আটক করে স্থানীয়রা। এ সময় তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

গত ২১ অক্টোবর টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে অবৈধ দোকান তৈরিতে বাধা দেয়ায় কবির আহমদ নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে আহত করে। এ ক্যাম্প থেকেই গত বছরের ৩০ জুন আনসার ব্যারাকে হামলা চালায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এ সময় আনসার কমান্ডারকে গুলি করে হত্যা এবং ১১ অস্ত্র লুট হয়। পরে র‌্যাবের অভিযানে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেশিরভাগ অপরাধীই ধরা পড়েনি।

কুতুপালং ক্যাম্পে গত এক বছরে চারজন খুন হয়েছে। জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে এ ক্যাম্প থেকেই আটক হয়েছে অন্তত ১৫ রোহিঙ্গাকে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রোহিঙ্গারা ক্রমশ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। তাদের বেপরোয়া আচরণে অসহায় স্থানীয়রা।

এদিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বছর শেষে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের। সম্প্রতি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) শীর্ষ দুই কর্মকর্তা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ কথা জানিয়েছেন।

তাদের মতে, প্রতিদিন ১০-২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে ১০ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটবে।

অপরদিকে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২৮ জাতির ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তাবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টোস স্টাইলিয়ানাইডস বাংলাদেশে এসেছেন। মঙ্গলবার তিনি কক্সবাজার যান।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের শরণার্থী, জনসংখ্যা ও অভিবাসনবিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী সিমন হেনশর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমার সফর শেষে বুধবার ঢাকা আসবেন। এ ছাড়া ৫ ও ৬ নভেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে অংশীদারী সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। ১০-১৪ নভেম্বর ফিলিপাইনে অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যোগ দেবেন। আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের শীর্ষ নেতৃত্বও সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে কড়া বার্তা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে মিয়ানমারের কোনো আশ্বাসেই বাংলাদেশ আস্থা রাখতে পারছে না-জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এমটিই জানানো হয়েছে বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে মিয়ানমার গড়িমসি করছে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপীয় আলোচনায় কী ফল আসবে তাও অনিশ্চিত। এরপরও আমরা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাই।

দ্বিপীয় আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, ছলচাতুরির আশঙ্কা থাকলেও মিয়ানমারের আহ্বানে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।