জাতিসংঘে ভোট দিল না ভারত, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হল ভারতের অবস্থান। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের এজেন্ডা নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ভোটাভুটিতে ভারত ভোটদানে বিরত থাকে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসি’র আহবানে এ ভোটাভুটির আয়োজন করে জাতিসংঘ। এতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান বন্ধের প্রস্তাব পাশ হয়।
.
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান বন্ধে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহবান জানানো হয়। সেই সাথে দেশ থেকে বিতাড়িত ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার এবং তাদের পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়।

এদিন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে এ ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ ১৩৫টি দেশ। মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দেয় চীন, রাশিয়া সহ ১০টি দেশ। তবে এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জড়িয়ে পড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ঘনিষ্ট মিত্র ভারত। সেইসাথে দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, শ্রীলংকাসহ ২৬টি দেশ এ ভোটাভুটিতে নিজের অবস্থান জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। রাখাইনে গণহত্যার শুরুর পর থেকে ভারত সরকার এ ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে আছে বলে দাবী করলেও এ ভোটাভুটিতে তারা অংশ নিতে বিরত থাকে।

উল্লেখ্য গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে শুরু হওয়া এ অভিযান শুরু হলে হত্যা, গণধর্ষণ, নির্যাতন থেকে বাঁচতে এখন পর্যন্ত ছয় লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সাম্প্রতিক কালের বর্বরোচিত এ জাতিগত নিধনে দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথে যোগ দেয় স্থানীয় উগ্রবাদী বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীও। আক্রান্ত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাঁচাতে ও আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত খুলে দেয় এবং তাদের পাশে দাঁড়ায়।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন বন্ধের আহবান জানালেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। সেইসাথে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অস্বীকার করে দেশটি।

এ অভিযান শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাৎক্ষণিক এক সফরে মিয়ানমার যান। সেখানে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সাথে একান্তে বৈঠকে মিয়ানমারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। এটি ছিল ক্ষমতায় আসার পর মোদির প্রথম মিয়ানমার সফর।

এদিকে প্রতিবেশী মিত্র দেশে ভারতের অবস্থান নিয়ে শুরুতেই বাংলাদেশ দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ এ সংকটে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে ভারতকে সবার আগে কাছে পাওয়ার আশা করছিল বাংলাদেশ। তখন মোদির মিয়ানমার সফরের এক সপ্তাহ পরে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে দিল্লী থেকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক ফোনালাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।

গত ২২ অক্টোবর তিনদিনের সফরে সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে এলে তখনও তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের পক্ষে তার সরকারের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরেন। এ ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর নীতিগত অবস্থানের কথা জানান তিনি।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, লাখো রোহিঙ্গার চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেবে প্রতিবেশী ভারত। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বোঝা সামলাতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে তারা। তিনি বলেন, ভারত মনে করে, রাখাইনে সংঘাত অনতিবিলম্বে বন্ধ হওয়া এবং স্বাভাবিকতা ফিরে আসা উচিত।

একই দিনে সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের সংগঠন আসিয়ানের (এএসইএএন) দেশগুলোর কূটনীতিকদের সাথে ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে দুই দেশের প্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এ ছাড়া অক্টোবরের ৬ তারিখ দিল্লী সফরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের ভূমিকায় বাংলাদেশ খুশি। সেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে ভারতের সাথে আলোচনা শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, এই ইস্যুতে দুটো দেশ একসাথে আছে এবং একসাথে থেকেই তারা এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে বিরত থাকার কারণে ভারতের অবস্থান নিয়ে আবারও সন্দিহান বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে চরম সংকটকালীন মূহুর্তে প্রতিবেশী মিত্র ভারতের ভূমিকা আসলে কতটুকু, এ প্রশ্নই আবার ফিরে আসল!