জাবি শিক্ষকদের দলাদলির শেষ কোথায়!

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি থেকে : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য হিসেবে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ২০১৪ সালের ২ মার্চ চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য। এর আগে ফেব্রয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিনেট অধিবেশনে তিনজন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে প্রথম হয়েছিলেন অধ্যাপক ফারজানা।

সে হিসেবে ২০১৮ সালের ২ মার্চ তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি পুনরায় নিয়োগ প্রাপ্ত হচ্ছেন এই গুঞ্জন উঠলে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেন। সাবেক উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবিরের নেতৃত্বে তারা ১২ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) অ্যাক্ট ’৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

জাবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে তারা এই দাবি করেন। এই শিক্ষক সংগঠন এতদিন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সমর্থিত থাকলেও প্রথমবারের মত তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কর্মসূচি দেন।

বিরোধের শুরু যেখানে :

উল্লেখ্য আওয়ামী শিবিরের এই বিভেদ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এতদিন সাবেক উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবিরের ইশারায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন চালালেও রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট নির্বাচনে নিজের প্যানেল তৈরী করেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তবে নির্বাচনে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামপন্থী গ্রাজুয়েটরা মাত্র একটি আসন পেলেও অধ্যাপক শরীফ এনামুলের কবিরপন্থী গ্রাজুয়েটরা পায় ১৮ টি আসন।

আওয়ামী শিবিরের স্পষ্ট বিভেদ ও শরীফ পন্থীদের বিজয়ের তৃপ্তির মধ্যেই ১৮ ফেব্রæয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর ১১(১) ধারা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে লিখিতভাবে পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়।
এরপর পরই উপাচার্যকে সরাতে উঠে পড়ে লাগে শরীফপন্থী শিক্ষকরা ।

আওয়ামী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’এর ব্যানারে তারা উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সিনেট সদস্যদের তলবি সভা আহ্বানের দাবিতে ১৯ ফেব্রয়ারি বেলা ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে।

হাইকোর্টে রিট :

২৬ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকারীরা উপাচার্য নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত হাসান ও বিচারপতি মোঃ সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘জাবি ভিসি নিয়োগ কেন অবৈধ নয়’ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। যদিও বা সে রুল এখনো নিষ্পত্তি হয় নি।
এই সময় একই ব্যানার ব্যবহার করে সাবেক ভিসি ও বর্তমান পন্থী শিক্ষকরা পরস্পরকে ভয় ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ আনেন।

২১ ফেব্রুয়ারি কি ঘটেছিল শহিদ মিনারে!

এরই মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি নতুন বিতর্কের জন্ম দেয় শরীফপন্থী দুই উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন (শিক্ষা) ও অধ্যাপক আমির হোসেন (প্রশাসন)।

প্রটোকল অনুযায়ী শহিদ মিনারে ভাষা শহিদদের প্রতি উপাচার্যের সাথে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার কথা উপ-উপাচার্যদ্বয়ের। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শ্রদ্ধাাঞ্জলি অর্পণ করতে গেলে শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে থাকা সত্তে¡ও যোগ দেন নি তাঁরা।

এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি +৮৮০৪৪৪৫৬৫১৬৫৫ এই নম্বর থেকে মেসেজ দিয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের উপাচার্যের শ্রদ্ধা জানাতে নিষেধ করে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’এর কার্যনির্বাহী কমিটি। যে কমিটির সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অপর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন।

অন্য দিকে শিক্ষক সমাজের দলীয় নিষেধ থাকায় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকা সত্তে¡ও অনুষদের ডিন, প্রক্টর, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ উপাচার্যের সঙ্গে শ্রদ্ধা জানানো থেকে বিরত ছিলেন।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ও বিএনপির ভোট কার বাক্সে :

চলমান অচলাবস্থার মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘শিক্ষক সমিতি-২০১৮’ ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে বিশ^বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয়লাভ করতে মরিয়া হয়ে উঠে আওযামী শিবিরের দুই পক্ষ। শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারীরা লড়াই করেন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে অন্যদিকে ফারজানা ইসলামের সমর্থন পাওয়া শিক্ষকরা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দীতা করেন।

অন্যদিকে হঠাৎ করে খালেদা জিয়াকে ‘সাজানো মামলায় কারাবন্দি করে রাখার’ প্রতিবাদ হিসেবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপন্থী শিক্ষকরা।

নির্বাচনে হেভিয়েট প্রার্থী ছিল শরীফ এনামুল কবীর পন্থীদের। জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসীও ছিল তার।

কিন্তু ফারজানা ইসলামপন্থী অধ্যাপক মো. নূরুল আলম সভাপতি ও অধ্যাপক বশির আহমেদ ই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বিএনপি পন্থী ভোট নিশ্চিত করেই জিতেছেন উপাচার্য সমর্থিতরা।

নতুন ডিন নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক :

১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত পৃথক দু’টি অফিস আদেশের মাধ্যমে সমাজ বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের ডিন হিসেবে নতুন নিয়োগ দেয় উপাচার্য।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন হিসেবে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আখতারকে ও আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন হিসেবে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদকে নিয়োগ দেয়া হয় যারা ইতিমধ্যে শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

আইন অনুষদের ডিন নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন হয়েছে দাবি করে এই আদেশের বিরুদ্ধে আবার মাঠে নামেন অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরপন্থী শিক্ষকরা। আইন অনুষদে একজন সহযোগী অধ্যাপক থাকা সত্তে¡ও অন্য বিভাগ থেকে ডিন নিয়োগ বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর পরিপন্থী বলে দাবি করেন তাঁরা।

উপাচার্য ফারজানা ইসলামের প্রশাসকি রদবদল :

২৮ মার্চ, ২১ ফেব্রুযারির ঘটনার প্রথম প্রতিক্রিয়া দেখালেন উপচার্য ফারজানা ইসলাম। প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহাকে অব্যাহতি দিয়ে ১৩ সদস্যের নতুন প্রক্টরিয়াল বডি গঠন করা হয়েছে। নতুন প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মোঃ জুলকারনাইনকে যিনি ফারজানা ইসলাম পন্থী এবং অব্যাহতি পাওয়া প্রক্টর শরীফ এনামুল কবির পন্থী বলে পরিচিত।

এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের হামলায় প্রক্টর সহ ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে এনাম মেডিকেলে ভর্তি হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি যখন থমথমে তখন ঐ দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি হলের প্রাধ্যক্ষদের অব্যাহতি দিয়ে নতুন নিয়োগ দেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এরপরদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেন উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ। উপাচার্য ফারজানা ইসলাম দাবি করেন ৯টি হলের প্রভোস্ট প্রশাসনিক কাজ বন্ধ রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া তাদের প্রাধ্যক্ষের নির্দিষ্ট মেয়াদও শেষ হয়েছে। তাই নিয়ম মেনেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

শিক্ষকদের হাতাহাতি :

১৭ এপ্রিল ঘটে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। ‘অবৈধভাবে ৯টি আবাসিক হলে প্রভোস্ট নিয়োগের’ প্রতিবাদে শরীফপন্থী শিক্ষকদের ডাকা ধর্মঘট পালনকালে ফারজানা ইসলামপন্থী শিক্ষকদের দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বিশ^বিদ্যালয় পরিবহন ডিপুতে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৮ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছে বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে।

হাতাহাতি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে।
হামলার পরিপেক্ষিতে ১৮ এপ্রিল প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, তাদের গ্রুপের শিক্ষকদের উপর ‘হামলাকারী’ শিক্ষকদের শাস্তি এবং হাতাহাতির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯, ২২ ও ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারি এবং সাংবাদিক সংগঠনের সাথে গণসংযোগ কর্মসূচি চালানো হয়। এরপর ২৪ এপ্রিল প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি এবং ২৬ এপ্রিল সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হয়।

শরীফপন্থীদের গণসংযোগ চলাকালে বসে ছিলেন না উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। তিনি ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সাংষ্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ ও ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন। ছাত্রলীগ উপাচার্যকে নিরুঙ্কুশ সমর্থন করলেও বাকিরা নিরপেক্ষ অবস্থান নেন।

অন্যদিকে পূর্বের দাবিতে আবার ৩০ এপ্রিল ও ৩ মে পুনরায় প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
এরপর বেশ কিছুদিন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয় লিফলেট ছাড়ে দুই পক্ষ ই। তাদের এই লিফলেট বিতরণ চলে বেশ কিছদিন

প্রতীকী সিনেট :

চলমান আন্দোলনের মধ্যেই ১২ মে প্রতীকী সিনেট ডাকেন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’।
শিক্ষক সামজের সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ প্রতীকী সিনেট অধিবেশনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

তারা বলেন, ‘সিনেটের তলবি সভা ডাকার জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৪৬ জন সিনেট সদস্য উপাচার্য বরাবর চিঠি দেন। সিনেট কার্যপরিচালনা বিধি অনুসারে চিঠি পাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে সিনেটের তলবি সভা আহ্বান করার কথা। কিন্তু ৯৫ দিন পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য সভা আহ্বান করেননি। তাই আজ এই প্রতীকী সিনেট অধিবেশন।

সিনেট অধিবেশন বানচাল :

বিশ^বিদ্যালয়ের ৩৭ তম সিনেট অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল ২৮ জুন। বেলা ৩ টায় সিনেট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ ও কয়েকজন সিনেটররা উপচার্যের বিরুদ্ধে অ্যাক্ট, স্ট্যাটিউট ও কার্যপ্রণালী বিধি লংঘনের অভিযোগ এনে প্রশাসনিক ভবনের সামনের তিনটি ফটকে ব্যানার ঝুলিয়ে অবস্থান নেনর্র্। ফলে বাধার মুখে সিনেট না করেই ফিরে যেতে হয় উপাচার্যকে।

আবার অবরোধ, প্রবেশিকা বর্জন :

এর মধ্যে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার, উপাচার্যের অ্যাক্ট, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের প্রতিবাদ, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেওয়া, জাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, বিধি অনুযায়ী আইন অনুষদের ডিন নিয়োগ ও প্রভোস্ট কমিটির সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করার দাবিতে ২৪ ও ২৫ জুলাই জাবির প্রশাসনিক অবরোধ করেন উপাার্যবিরোধীরা। যদিও বা তাদের মুল দাবি ছিল আইন অনুষদের ডিন নিয়োগ ও বিধি অনুযায়ী হল প্রভোস্ট সভাপতি নিয়োগ।

পূর্ব ঘোষণা না দেয়া নিয়ে বলেন,‘ ১০ জুলাই তাদের সাথে মিটিংয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে আইন অনুষদের ডিন পদে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রবিউল ইসলামকে নিয়োগ দিবে বলে কথা দেন উপাচার্য কিন্তু ২২ জুলাই দেখা করতে গেলে তিনি নিজে অসুস্থতার কথা বলে দেখা করেন নি এবং তাদের দাবিও মেনে নেনে নি।’

হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি জৈষ্ঠতার লঙ্গন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্টকে না দিয়ে শহীদ রফিক জাব্বার হলকে দেয়া হয়। শিক্ষক সমাজের নেতারা অভিযোগ তুলেন,‘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট তাদের শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় উপাচার্য এই অন্যায় করেছেন। ’

একই দাবিতে ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রবেশিকা অনুষ্ঠান প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে শেষপর্যন্ত বর্জন করে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’।

তবে এখানেই কি শেষ আওয়ামীপন্থী বিভক্ত দুই শিবিরের দলাদলি! প্রশ্ন সবার কিন্তু উত্তর নেই কারো। সামনে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা। এভাবে দিনের পর দিন প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ থাকলে ঠিক সময়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।