জামাইয়ের ভাগে লাঙ্গল, শ্বশুর পেলেন সিংহ

নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের আলোচিত প্রার্থী জামাই-শ্বশুরকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শ্বশুর লাঙ্গলের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করলেও জামাই রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার ভাগেই জুটেছে সেই লাঙ্গল প্রতীক। আর জিয়াউল হক মৃধা পেয়েছেন সিংহ প্রতীক।

সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি নির্বাচনী আসনের বৈধ প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন।

তবে জামাই-শ্বশুরের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে প্রথম থেকেই দোটানায় ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। দুই প্রার্থীই লাঙ্গল প্রতীক চাওয়ার ফলে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। তবে দুবারই তার প্রতীক ছিল লাঙ্গল। এবারও তিনি জাপা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তার বদলে মেয়ের জামাই ও জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে জাপার মনোনয়ন দেয়া হয়।

এর ফলে জামাই-শ্বশুর নামের পিতা-পুত্রের সম্পর্ক রূপ নেয় শত্রুতায়। সরাইলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে শ্বশুর সমর্থকরা জমাইয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। জামাই রেজাউলকে বহিরাগত প্রার্থী উল্লেখ করে তাকে সরাইল-আশুগঞ্জের মানুষ মেনে নেবে না বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন শ্বশুর।

অবশ্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেজাউল ইসলাম ভূইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসন থেকে জাপার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসন থেকে জাপার মনোনয়ন পান। তার মনোনয়ন পাওয়ার খবর সরাইল-আশুগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিক্ষোভ শুরু করেন জিয়াউল হক মৃধার কর্মী-সমর্থকরা।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক স্বতন্ত্র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে শেষ পর্যন্ত রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে মহাজোট থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয় অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে। এতে লাঙ্গল প্রতীক দেয়ার জন্য জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দেন।

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থীতে রূপান্তর করা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে সোমবার এ আসনে সব প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হলেও রেজাউল ইসলাম ভূইয়া ও জিয়াউল হক মৃধাকে প্রতীক বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়। পরে সন্ধ্যায় রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে জাপার দলীয় প্রতীক লাঙ্গল ও জিয়াউল হক মৃধাকে সিংহ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।

প্রতীক বরাদ্দের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থীতে রূপান্তরিক করার কোনো সুযোগ নেই। জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তাই তাকে সিংহ প্রতীক আর জাপার দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেয়ায় রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।