জামায়াতকে নিয়ে দোটানায় বিএনপি, কী ভাবছে ঐক্যফ্রন্ট?

সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে চলছে নানান হিসাব-নিকাশ।

একদিকে যেমন চলছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পরিধি আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া, অন্যদিকে চলছে তাদের বর্তমান শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির দেনদরবার।

তেমনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটেও চলছে একই হিসাব-নিকাশ। এর মধ্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গঠিত নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শরিক হয়েছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত আছে, আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। এ হিসেবে বিএনপি ২৩ দলীয় জোটে পরিণত হয়েছে।

তবে শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে দোটানায় পড়েছে বিএনপি। কারণ ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। ফলে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া জামায়াত আর দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাই এখন জামায়াতকে হয় বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ধানের শীষে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে, না হয় স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে হবে।

নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা নির্বাচনে কীভাবে অংশ নেবে সেটি বেশ কৌতূহল তৈরি করেছে।

সমীকরণ জটিল হওয়ায় আরেকটি কারণ হচ্ছে, বিএনপি ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিক দলগুলোর জামায়াতবিরোধী অবস্থান রয়েছে।

এ বিষয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জানিয়েছেন- বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

মওদুদ জানান, বিএনপির মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে দুই ধরনের মতামত আছে। একটি অংশ মনে করছে যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচন করলে কোনো ক্ষতি নেই। আরেকটি অংশ মনে করে, ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের নির্বাচন না করাই ভালো।

তিনি জানান, আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান এবং মির্জা আব্বাস এ কমিটির সদস্য।আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে তারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর সে কমিটি একটি খসড়া তৈরি করে স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠাবে।

বিএনপি মনে করছে ১০ শতাংশ নিয়ে জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে জোরালো দরকষাকষি হতে পারে।

এ বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘যেখানে আমাদের ভালো প্রার্থী আছে সেটাকে আমরা চাইব না বিসর্জন দিতে। একটা বিষয়ে সবাই একমত যে আমাদের এমন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া উচিত যার জেতার সম্ভাবনা আছে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান গত বুধবার বলেছেন, তারা জোটের ভিত্তিতেই নির্বাচনে অংশ নেবেন।জামায়াতের এই নেতা জানান, তাদের দলের আনুমানিক ৫০-৬০ জন এবারের নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আপত্তি তোলে ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা। বিএনপি যেন জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা ত্যাগ করে- এমন পরামর্শও দেয়া হয়।

তবে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের কোনো ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা এবং গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, এখানে জামায়াতে ইসলামী আসার কোনো সুযোগ বা সম্ভাবনা আছে বলে আমরা মনে করছি না।

যেখানে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা প্রার্থী হবে সেখানে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী দেবে কিনা? এমন প্রশ্নে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেখানে প্রার্থী দেবে, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ৩০০ আসনে সর্বসম্মতভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।’