জামায়াতের জন্য নতুন রূপে কাজ করা কতটা সহজ হবে?

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ও সাংগঠনিক কাঠামোয় ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চাওয়া এবং দলে সংস্কারের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং আরেকজন নেতাকে বহিষ্কারের মধ্যে দিয়ে দলটির ভেতরকার টানাপড়েন প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে।

জামায়াতের রাজনীতির একজন ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক শাহ আবদুল হান্নান বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন যে, তুরস্কে একে পার্টি বা তিউনিসিয়ার এন্নাহদার মতো একটি নতুন দল গঠন করার কথা ভাবা হচ্ছে জামায়াতের ভেতরে।

কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব?

বিবিসি’র পুলক গুপ্ত’র এমন প্রশ্নের জবাবে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক রওনক জাহান বলছেন, তুরস্ক ও তিউনিসিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক পার্থক্য রয়েছে।

“প্রথমত জামায়াতের দুটি ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। আর একাত্তরের গণহত্যাকে তারা সমর্থন করেছিলো।”

“তুরস্কে বা তিউনিসিয়ায় ইসলামিক যে দল তাদের এমন নেগেটিভ ইমেজ ছিলোনা”।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে মূলধারার গণতান্ত্রিক দল অনেক দিন ধরেই আছে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তা নেই। সেখানে ইসলামপন্থী দলগুলোই সামরিক শাসন বা এ ধরনের কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

নতুন আকার নিয়ে কাজ করা সম্ভব জামায়াতের পক্ষে?

তুরস্ক বা তিউনিসিয়া স্টাইলে জামায়াতের পক্ষে কি এখন নতুন আকার নিয়ে কাজ করা সম্ভব ?

এমন প্রশ্নের জবাবে রওনক জাহান বলেন, ঠিক এ মডেল হয়তো কাজ করবেনা কিন্তু তাদের সামনে হয়তো কিছুটা সুযোগ আছে।

“মূল ধারার যে গণতান্ত্রিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপি হয়তো আমলা বা শাসকশ্রেণীর লোক নিয়ে হয়েছে কিন্তু আওয়ামী লীগ অনেক দিন ধরে সুবিধা বঞ্চিতদের পার্টি ছিলো।”

“এখন আওয়ামী লীগের আমলা ব্যবসায়ীরা ঢুকে গেছে। সেখানে একটা শুণ্যতা আছে”।

‘ইসলাম’ শব্দ না থাকলে কী প্রভাব পড়বে?

তবে জামায়াত তো এতদিন বলে এসেছে যে কোরআন তাদের সংবিধান আর এখন বলছে নামের মধ্যে ইসলামি শব্দটাও থাকবেনা।

তাহলে এ ধারায় যারা বিশ্বাস করতো তারা কি তাদের রাজনীতিতে বিশ্বাসী হবে?

জবাবে রওনক জাহান বলেন, তারা ধর্মকে একেবারে ছেড়ে দেবে বলে মনে হয়না।

কিন্তু তারা যে দিকটা সামনে আনবে সেটি হতে পারে সামাজিক কল্যাণ বা ন্যায় বিচার এসব বলে সুবিধাবঞ্চিত লোকদের টানার চেষ্টা করবে।

“তারা ধর্মকে একেবারে ছেড়ে যাবেনা। যেমনটি তুরস্কের জাস্টিস পার্টি করেছে”।

তিনি বলেন, “জামায়াতের তরুণরাও হয়তো বাইরের দেশগুলো দেখছে। তারা হয়তো ভাবছে রিব্র্যান্ডিং করে তারপরে কাজ করতে পারে।”

“তবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদেশের মতো সহজ হবেনা। কারণ একাত্তরে তাদের ভূমিকা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। আর সেটাই হবে তাদের জন্য বড় সমস্যা”।