জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে শুভ সূচনা বাংলাদেশের

ব্যবধানটা হতে পারতো আরও অনেক বেশি। তবে ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানরাও বেশ দৃঢ়তার পরিচয় দেন। বিশেষ করে শেষ দিকে এসে ব্যাবধানটা তারা অনেক কমিয়ে আনে। তবুও বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সুবাধে ২৮ রানে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শুভ সূচনা করলো বাংলাদেশ।

জয়ের জন্য ২৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল জিম্বাবুয়ে। ৪৩ বলেই ৪৮ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার। শেষ পর্যন্ত ব্রেক থ্রু এনে দিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে জিম্বাবুয়ের। শট উইলিয়ামস ৫০ রান না করলে ব্যবধানটা আরও বেশি হতে পারতো। শেষ মুহূর্তে কাইল জার্ভিসও চড়াও হয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর। যে কারণে ব্যবধান অনেক কমে আসে।

২৭২ রানের লড়াকু চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের বোলাররা রয়েছেন অসাধারণ ফর্মে। এশিয়া কাপেই প্রমাণ হয়েছে। সে কারণে ২৭২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়ার পর জয়ই আশা করতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু জবাব দিতে নেমে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার তো শুরু থেকে রীতিমত বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন।

দুই ওপেনার অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা এবং চেপাস জুয়াইউ মিলে ৪৩ বলেই গড়ে ফেলেন ৪৮ রানের জুটি। যেন টি-টোয়েন্টি খেলা শুরু করেছিলেন তারা দু’জন। মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মেহেদী হাসান মিরাজ শুরু করেছিলেন বোলিং আক্রমণ।

কিন্তু দু’জন তো কোনো সাফল্য পাচ্ছিলেনই না। বরং, তাদেরকে পিটিয়ে বার বার মাঠছাড়া করছিলেন দু’জন। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে ডেকে আনতে বাধ্য হন মাশরাফি। বোলিংয়ে এসে প্রথমটি দিয়েছিলেন ওয়াইড। পরের বলেই চেপাস জুয়াইউর স্ট্যাম্পই উড়িয়ে নিলেন বাংলাদেশের এই কাটার মাস্টার।

বলটা উইকেটে পিচ করে সাপের মত ব্যাট এবং প্যাডের মাঝের ফাঁকা জায়গা খুঁজে নিয়ে সোজা আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। জুয়াইউর অফ স্ট্যাম্পে বল লেগে সেটা উড়েই গিয়েছিল। বার কয়েক গোত্তা খেয়ে গিয়ে সেই স্ট্যাম্প থামে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের সামনে। ২৪ বলে ৩৫ রান করে আউট হয়ে যান চেপাস জুয়াইউ।

এরপর মাসাকাদজার সঙ্গে জুটি বাধতে আসেন ব্রেন্ডন টেলর। যিনি উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ৫টি ক্যাচ নিয়েছিলেন আজ। তবে খুব বেশিক্ষণ নয়, ১১ রানের জুটি গড়ার পর স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১৩ বল খেলে করেছেন মাত্র ৫ রান।

দলীয় ৬৩ রানের মাথায় দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ইমরুল কায়েসের থ্রো ধরে মাসাকাদজার স্ট্যাম্প ভেঙে দেন মুশফিকুর রহীম। এরপর নাজমুল ইসলাম অপুর বলে বোল্ড হয়ে যান সিকান্দার রাজাও। উইকেট নেয়ার আনন্দে অপু মেতে ওঠেন তার বিখ্যাত নাগিন ড্যান্স দিয়ে।

মোস্তাফিজের দেখাদেখি জিম্বাবুইয়ানদের ওপর ঘূর্ণির মায়াজাল বিস্তার করেছেন স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। তার ঘূর্ণিতে পড়ে আরও তিনটি উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। যদিও এর মধ্যে একটি ছিল রানআউট।

দলীয় ১০০ রানের মাথায় ক্রেইগ আরভিন ২৪ রান করে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে। এরপরই একটি মাঝারি মানের জুটি গড়ে তোলেন শন উইলিয়ামস আর পিটার মুর। ৪৫ রানের জুটি গড়ার পর অবশ্য সেখানে আঘাত হানেন মিরাজ। তার ঘূর্নিতে বিভ্রান্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান পিটার মুর।

১৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যখন দিশেহারা জিম্বাবুয়ে, তখন সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ফজলে মাহমুদের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে যান ডোনাল্ড তিরিপানো। বিপদ আরও বাড়ে তাদের। তবে শেষ মুহূর্তে ব্রেন্ডন মাভুতা ১৬ বলে ২০ এবং কাইল জার্ভিস ৩৩ বলে ৩৭ রান করলে অনেকটাই এগিয়ে আসে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ব্যবধান কমালেও জয়ের লক্ষ্য থেকে অনেক দুরে থাকায় শেষ পর্যন্ত আর পারলো না জিম্বাবুয়ে।

সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২ উইকেট নেন নাজমুল ইসলাম অপু। ১টি করে উইকেট নিলেন মোস্তাফিজ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৭১ রান। ১৪৪ রান করেন ইমরুল কায়েস। সাইফউদ্দিন করেন ৫০ এবং মোহাম্মদ মিঠুন করেন ৩৭ রান।