জোট ছাড়ল টিডিপি, অনাস্থার মুখে মোদি সরকার

সমস্ত টানাপোড়েনের অবসান। অবশেষে এনডিএ জোট ছাড়ার কথা জানিয়ে দিলেন তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু। এরপরই জোট বেঁধে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। শুক্রবার সকালে দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন চন্দ্রবাবু।

টিডিপি জানিয়েছে, স্পেশ্যাল স্ট্যাটাস বা বিশেষ অধিকার না দিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশকে অপমান করেছে কেন্দ্র। এর পর এনডিএ-র সঙ্গে জোট বজায় রাখা সম্ভব নয়।

অন্ধ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার আরেক দল ওয়াই এস আর কংগ্রেস। অন্ধ্রের রাজনীতিতে ওয়াই এস আর-এর নেতা জগন রেড্ডির সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুর অহি-নকুল সম্পর্ক। তা সত্ত্বেও ওয়াই এস আর-এর আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে যেন ‘জোটাবার্তা’ দিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু।

আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চন্দ্রাবাবু এবং জগনের সম্মিলিত ‘বিদ্রোহে’ এনডিএ সরকারের স্থায়িত্বে সমস্যা হবে না ঠিকই। কিন্তু বিজেপির একাংশের আশঙ্কা, আঞ্চলিক দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য অন্যান্য শরিক দলগুলো একই রকমের কড়া অবস্থান নিলে সমস্যায় পড়ে যেতে পারে মোদি সরকার। শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক এমনিতেই খারাপ। তার ওপর টিডিপি, ওয়াই এস আর কংগ্রেস চিন্তা আরও বাড়ালো মোদি-শাহদের।

গতকাল চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছিলেন, ‘বাজপেয়ী জমানাতেও তারা এনডিএ জোটে ছিলেন। তাদের পরামর্শ নিতেন বাজপেয়ী। কিন্তু মোদি সরকারের আমলে তাদের কথা শোনাই হয় না।’

টিডিপি-র সঙ্গে কেন্দ্রের মোদি সরকারের সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছিল অন্ধ্রের বিশেষ আধিকারের দাবি নিয়ে। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ আলাদা রাজ্য হিসেবে ভাগাভাগির পর মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু তার রাজ্য অন্ধ্রের জন্য বিশেষ অধিকারের দাবি তোলেন। কেন্দ্র জানায়, অন্ধ্রের দাবি মেনে বাড়তি অর্থ দিতে তারা রাজি আছে। কিন্তু বিশেষ অধিকার বা ‘স্পেশ্যল স্ট্যাটাস’ দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রের আশঙ্কা ছিল, অন্ধ্রকে যদি এই বিশেষ রাজ্যের সুবিধা দেওয়া হয়, তবে একই দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব কিংবা বিহারের মতো রাজ্যগুলোও গলা চড়াবে। দাবি পূরণ না হওয়ায় দিন দু’য়েক আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন টিডিপি-র দুই সংসদ সদস্য অশোক গজপতি রাজু এবং ওয়াই এস চৌধুরী। পাল্টা অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু ক্যাবিনেট থেকেও দুই বিজেপি মন্ত্রী বেরিয়ে আসেন। এর পর দুই দলের মধ্যে সামান্য যেটুকু সম্পর্ক অবশিষ্ট ছিল, তাও আজ ছিন্ন হয়ে গেল।

লোকসভায় টিডিপি সংসদ সদস্যের সংখ্যা ১৬, জগনের দলে রয়েছেন ৯ জন। অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার জন্য ন্যূনতম ৫০ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন দরকার।

এদিকে, জোট বেঁধে অনাস্থার প্রক্রিয়া নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। অনাস্থায় চন্দ্রবাবু এবং জগনকে সমর্থন দিতে রাজি হয়েছে সিপিএম। পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। সব মিলিয়ে দিল্লির রাজনীতিতে একটু একটু করে বাড়ছে জোটের হাওয়া।