জোট বেঁধে ভোটের প্রস্তুতি ইসলামী দলগুলোর

জোটবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে একাধিক ইসলামী দল। নিজেরা জোট বাঁধার পাশাপাশি অন্য কোনো জোটে ভেড়ার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন দলগুলোর অনেক নেতা। ভোটের মাঠে সফল হতে বৈরিতা ভুলে কাছাকাছি আসার উদ্যোগ নিয়েছেন দলগুলোর নেতারা। এসব দলের একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ‘একলা চল’ নীতির ফল ভালো হয়নি। তাই আগামীতে তারা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চান। তবে এ উদ্যোগ কতটা সফল হবে তা সময়ই বলবে।

জানা গেছে, ইসলামী দলগুলো এক প্লাটফর্মে আসার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বিকল্প পথও খোলা রাখছে। ভেতরে ভেতরে কেউ কেউ আবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে শরিক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সফল হতে না পারলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কিংবা জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে সম্পৃক্ত হওয়ার পথও খোলা রাখছে। দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের পর দলগুলোর নেতাদের চিন্তায় একটু পরিবর্তন এসেছে। আপাতত তারা নিজেরাই জোট বাঁধার পরিকল্পনাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, ইসলামী দলগুলো সাংগঠনিক ও জনপ্রিয়তা বিচারসাপেক্ষে ন্যূনতম ২০টি আসনে জয়ী হওয়ার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, এককভাবে নির্বাচনের পরিকল্পনা নেই তাদের। হয় নিজেরা জোট গঠন করবেন নয়তো আওয়ামী লীগ, বিএনপি অথবা জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন বড় কোনো জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু ইসলামী আন্দোলন। চরমোনাই পীরের অনুগামী, ভক্ত, মুরিদ মিলিয়ে দলটির সাংগঠনিক পরিস্থিতি ধর্মভিত্তিক অন্য দলগুলোর চেয়ে ভালো। এ কারণে আপাতত দলটির কোনো জোটে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর কোনো জোট হলে সেখানে দেখা যেতে পারে ইসলামী আন্দোলনকে।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিসবাউর রহমান চৌধুরী, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পিরজাদা মোস্তফা আমির ফয়সাল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট থেকে নির্বাচনে আগ্রহী। এটি সম্ভব না হলে আলাদা জোটে দেখা যেতে পারে তাদের।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও। জোট নাকি এককভাবে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন তা দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই চূড়ান্ত হবে বলে জানান দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, তারা অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সমমনা ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি অভিন্ন ফ্লাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ।

জানা গেছে, ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিলেও দলীয় কৌশল প্রণয়ন করছে ভিন্নভাবেই। কোনো কোনো দল তৃণমূল পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছে প্রার্থীর তালিকা তৈরি করতে। কোনো দল আবার নির্বাচনী এলাকা ঠিক করতে গঠন করেছে নির্বাচন কমিশনও। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রাার্থী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। শেষ পর্যন্ত কত আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে, জোটগত না এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব- তা সময় বলবে।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছি। জেলায়-জেলায় চিঠি পাঠিয়েছি তালিকা পাঠাতে। তালিকা হাতে পেলেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে।’ খেলাফত মজলিস বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল। সূত্র জানায়, বনিবনা না হওয়ায় যে কোনো সময় তারা এ জোট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমমনা ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে আলাদা জোটে দেখা যেতে পারে তাদের।

জানা গেছে, জোটগত নির্বাচনে গেলে খেলাফত মজলিসের টার্গেট অন্তত তিনটি আসন। এগুলো হল- হবিগঞ্জের মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনে আহমদ আবদুল কাদের, সিলেট বিশ্বনাথে দলের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী এবং খুলনার কোনো একটি আসনে দলটির নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন। শেষ পর্যন্ত বিএনপি জোটে থাকলে দলটি সর্বোচ্চ দুটি আসনে জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আর নতুন ইসলামী জোটে গেলে সেখানে এ আসনের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা। একইভাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে একমাত্র কওমিভিত্তিক শক্তিশালী দল। জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে অন্তত দুটি আসনে মনোনয়ন আশা করছেন দলটির নেতারা। যদিও এ বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাছ বলেন, ‘আমরা ২০-২৫টি আসন টার্গেট করেছি। এসব আসনে কাজও শুরু করেছি।’

জানা গেছে, যশোরের মনিরামপুর আসনে নির্বাচন করবেন দলটির নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাছ। আর সুনামগঞ্জের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলের যুগ্ম মহাসচিব শাহীনুর পাশা চৌধুরী। যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, উবায়দুল্লাহ ফারুকসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তবে শারীরিক কারণে জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন দলটির নেতারা।

এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের একাধিক সূত্র জানায়, দলটি কমপক্ষে ১২টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। দলটির সাবেক চেয়ারম্যান মুফতি মাওলানা ফজলুল হক আমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। আগামী নির্বাচনে তার ছোট ছেলে খেলাফতে ইসলামীর চেয়ারম্যান মাওলানা হাসানাত আমিনী এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর টার্গেট নরসিংদী শিবপুর আসন, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া আসন। ময়মনসিংহ ফুলপুর-তারাকান্দা আসনে দলের সিনিয়র নেতা মুফতি তৈয়্যব, কুমিল্লার মেঘনা-দাউদকান্দি আসনে মাওলানা আলতাফ হোসাইন ও মুন্সীগঞ্জের একটি আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতে আগ্রহী মাওলানা আবদুল হামিদ। আর ফরিদপুরের নগরকান্দায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা লিয়াকত, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি, গাইবান্ধায় মাওলানা যুবায়েদ আহমদ, গাজীপুর সদরে মাওলানা ফজলুর রহমান, কেরানীগঞ্জে মাওলানা জসিম উদ্দিন এবং কুমিল্লা-হোমনায় প্রার্থী হতে চান মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ইসলামপন্থীদের নিয়ে একটি নির্বাচনী জোট। আমরা প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করছি। নির্বাচন যত কাছে আসবে, প্রস্তুতি তত বাড়বে।’ -যুগান্তরের সৌজন্যে প্রকাশিত।