ঝুঁকিতে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার একেবারে কাছে চলে এসেছে। এক দশমিক ২০ মিটার বাড়লেই পানির প্রবাহ পৌঁছাবে বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটারে। এতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ। গত মৌসুমে পদ্মায় পানির প্রবাহ ঠেকেছিল ১৮ দশমিক ৪৬ মিটার।

শুক্রবার বিকেল ৩টায় পদ্মার রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে পানির প্রবাহ রের্কড করা হয় ১৭ দশমিক ৩০ মিটার। সকাল ৬টায় তা ছিল ১৭ দশমিক ২৮ মিটার।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নগরীর বড়কুঠি স্ল্যান্টিং গেজ পাঠক এনামুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ১৭ দশমিক ১৫ এবং সন্ধ্যা ৬টায় ১৭ দশমিক ২০ মিটার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।

এদিকে উজানের ধেয়ে আসা পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পদ্মা। এতে চাপ বেড়েছে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধে। এরই মধ্যে সংস্কার করা নগরীর বুলনপুরে দেবে গেছে ব্লক। পশ্চিমের বুলনপুর ঘোষপাড়া এলাকাতেও বাঁধের ব্লক দেবে গেছে। এছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে সবমিলিয়ে অন্তত ৫টি পয়েন্ট। এতে আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এসব পয়েন্ট নজরদারিতে রাখলেও এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বুলনপুর ঘোষপাড়া এলাকায় ব্লক দেবে যাওয়া বাঁধের উপরেই আব্দুল খালেকের বাড়ি। তার মেয়ে মনি খাতুন বলেন, এলাকার গৃহস্থালির পানি নালার মধ্য দিয়ে গিয়ে পড়ছে বাঁধে। গত বছর বাঁধের একেবারে নিচের অংশ দেবে গিয়েছিল। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মেরামত করে দেয়। এ বছর বর্ষার শুরুতেই নালার নিচের অংশ দেবে গেছে। পাশের আরও কিছু ব্লক নিচে নেমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন দেখে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ধস আতঙ্কে রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না তারা।

রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় পুরোটা জুড়েই গড়ে উঠেছে স্থাপনা। বুলনপুর ঘোষপাড়া থেকে পশ্চিমের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বাঁধে ব্লক দেবে গেছে অনেক আগেই। সেখানকার বাসিন্দারা গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলছেন বাঁধেই। এছাড়া বাসাবাড়ির পয়ঃনালা গিয়ে পড়েছে বাঁধের উপরে। এতে ওই অংশে বেড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরণের গাছ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাঁধের এ অংশ রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ২৩ বছরের পুরনো। গেলো ৭ বছর ধরে নেই সংস্কার। গত মৌসুমে প্রবল স্রোতে বুলনপুর এলাকার টি-গ্রোয়েনে ফাটল ধরে। জিওব্যাগ ফেলে সেবার কোনো করমে ভাঙন ঠেকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত বছরের ৩০ অক্টোবরে নগরীর শেখেরচক বিয়ারীবাগান এলাকায় ওয়াকওয়েসহ দেবে যায় শহর রক্ষা বাঁধ।

রাজশাহী শহরের দিকে নদী সরে আসায় বাঁধের উপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু। তিনি বলেন, গত এক দশকে উজান থেকে নদী ভেঙে শহরের দিকে এসেছে প্রায় ৬শ মিটার। উজানে বাঁধের দুর্বলতায় নদীর দিক পরিবর্তন হচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের পুরোটাই সংস্কার করা জরুরি। নদী সরে আসায় প্রতি বছরই বাঁধের উপর চাপ বাড়ছে। বাঁধের উপর বাসাবাড়ির পয়ঃনালা গিয়ে পড়ায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম। এছাড়া ফারাক্কা খুলে দেয়ার পদ্মায় হঠাৎ করেই প্রবাহ বেড়েছে। রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬৭ মিটার। তাছাড়া বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে এখনো পানির প্রবাহ বইছে। নিয়মিত বাঁধ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বাঁধ ঝুঁকিতে পড়লে তা মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তুতি রয়েছে।