‘ট্রল করার আগে ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে একটু জানুন’

উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে (সোমবার) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সেখানে হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. ফিলিপ কোহের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।

ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে দেয়া শেষ ব্রিফ হচ্ছে – আগামী দুদিন তার কিডনির ডায়ালাইসিস করা হবে। আগের চেয়ে ভালো আছেন তিনি।

রোববার (৩ মার্চ) সকালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সিসিইউর ২ নম্বর বেডে লাইফসাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে।

এ খবর দেশের সবগুলো গণমাধ্যম ও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তার সুস্থতা কামনা করেন নেট জনতা। তবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ব্যাপক হারে ট্রল করতে দেখা যায়।

তার যেসব রাজনৈতিক কর্ম ও বক্তব্যতে দ্বিমত দেখা গেছে, সেসব কথাকে টেনে এনে হাস্যরসে মেতে ওঠেন বেশ কিছু নেটিজেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ অনেক সচেতন নাগরিক আক্ষেপ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

মুমূর্ষু এমন ব্যক্তির বিষয়ে এসব ট্রল না করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদেরের অবদান নিয়ে ভাবতে বলেছেন তারা।

এ বিষয়ে কাজী নিপু নামের এক সচেতন নাগরিক জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ট্রলে মেতে ওঠার আগে তার সম্পর্কে জেনে নিতে।

এ লেখায় তিনি বাংলাদেশের জন্য ওবায়দুল কাদেরের কিছু অবদান তুলে ধরে তার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

ফেসবুক থেকে নেয়া সেই লেখাটি দেওয়া হলো – ‘বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভূমির বঞ্চিত মানুষজন একনায়কদের আমলে নিজস্ব সত্ত্বা রক্ষার্থে লড়াই-সংগ্রাম তীব্রতর করেছিলো ১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর।

তাদের ক্ষোভ প্রশমনে রাষ্ট্রের উদ্যোগ যখন বলপ্রয়োগ থিওরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ, তখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সংগঠনটির শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছিলো যে আলাপ-আলোচনাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।

বঞ্চিতদের অবিসংবাদিত নেতা সন্তু লারমার সাথে সেই মোতাবেক দুর্গম পাহাড়ী জঙ্গলে যোগাযোগ করে আলোচনা চালানো হয় দলের হাইকমান্ডের প্রত্যাশা অনুযায়ী। এই যোগাযোগ স্থাপনকারী আর আলোচনাকারী ব্যক্তিটি কে জানেন? তিনি হলেন ওবায়দুল কাদের।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আদিবাসীদের (সরকারী ভাষ্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) সরকারের সাথে শান্তিচুক্তি করার ক্ষেত্রে পটভূমি সৃষ্টি আর আস্থা সৃষ্টিতে ভূমিকা ছিলো বহু আগে থেকে চলা ওবায়দুল কাদেরের ওইসব যোগাযোগ।

ওবায়দুল কাদের একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। একেবারে তৃণমূল বলতে যা বুঝায়, সেখান থেকে ছাত্র রাজনীতির লম্বা পথ হেঁটে ‌ধাপে ধাপে আজকের অবস্থানে এসেছেন তিনি। আন্দোলন সংগ্রাম, জেলজুলুম বহু চড়াই-উৎরাই পার হওয়া এই মানুষটি শুধু রাজনীতির পথ ধরেই হাঁটেননি। কখনও নেতা হয়ে হেঁটেছেন রাজপথে, কখনওবা পথচারীর বেশ ধরে ফুটপাতে!

আপনি হয়ত ভুলে গেছেন বছরতিনেক আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার লাইভ অ্যাকশনের কথা। আপনি হয়ত ভুলে গেছেন, তার কাজেকর্মে মুগ্ধ হয়ে এই আপনিই তাকে বাংলার ফাটাকেষ্ট বলে ডাকতেন। সব ভুলে আপনি স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাকে ট্রল করতে শুরু করেছেন।

কিন্তু ইতিহাস তাকে ভুলবেনা…কিছু মানুষ এখনো আছেন যারা রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেননি। তাদেরই একজন এই ওবায়দুল কাদের !

আজ তিনি হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। এই মানুষটি তার কলেজ জীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, প্রতিটি বড় বড় আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

১৯৭৫ -এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আড়াই বছর জেল খেটেছেন। এমনকি ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও তিনি ১৭ মাস জেল খেটেছেন। ১৯৭৭-১৯৮১ মেয়াদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। যুব-ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন সড়ক, পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজাত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনি। আপনি ভাবতেও পারবেন না ওবায়দুল কাদের কত বড় একজন রাজনীতিবিদ।

শুধু রাজনীতিবিদই না, একইসাথে তিনি একজন সাহিত্যিক এবং সাংবাদিকও !আমাদের তরুণ প্রজন্ম আজ ওবায়দুল কাদেরের মত একজন ব্যক্তিকে নিয়ে নোংরা রসিকতায় ব্যস্ত। যে মানুষটির জীবন এতটা কষ্ট-সংগ্রামে পরিপূর্ণ, যার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এতটা উজ্জ্বল।

সামান্য সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে তাকে ট্রল করে আপনি যে ইতিহাস কতটা বিকৃত করছেন, তা ভেবেছেন কি? ওবায়দুল কাদের স্যারের অবস্থা এখন আশংকাপূর্ণ। হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। আপনি যদি তার হেটার্সও হয়ে থাকেন, তবুও বলি, আসুন অন্তত আজকের দিনটা আমরা তার সুস্থতা কামনা করে দোয়া করি।

সুস্থ হয়ে উঠুন জনাব ওবায়দুল কাদের।’