ট্রাম্পকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে মার্কিন সেনাবাহিনী!

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে যেকোনো সময়। মার্কিন সামরিক কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।

পল ক্রেইগ রবার্টস নামে সাবেক এক মার্কিন সহকারি মন্ত্রী এমনই এক বিদ্রোহের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন সম্প্রতি। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিশাল ষড়যন্ত্রের আভাস দিয়েছেন ১৯৮০-র দশকের মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান আমলের সহকারি অর্থমন্ত্রী পল ক্রেইগ রবার্টস।

নিজের ওয়েবসাইটে এক ব্লগে এই অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট ‘THE COMING COUP TO OVERTHROW PRESIDENT TRUMP: SEDITION AT THE HIGHEST LEVELS’ শিরোনামের একটি লেখায় সবিস্তারে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রাশিয়া-প্রীতি’ নিয়ে যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করছে মার্কিন সামরিক হাইকমান্ড। সাউথ ফ্রন্ট ডট ওআরজি নামের একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিশ্লেষণমুলক লেখালেখির ওয়েবসাইটেও পল ক্রেইগের লেখাটি প্রকাশ করা হয়েছে।

পলক্রেইগ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক/নিরাপত্তা কমপ্লেক্সের বার্ষিক বাজেট এক হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে সেইসব আমেরিকান করদাতাদের দেয়া কর থেকে, যাদের নিজেদেরই বহু চাহিদা অপূর্ণ রয়েছে।

জনগণের এত অর্থ শুধু সামরিক খাতের বাজেটে নেয়াকে যুক্তিযুক্ত করতে দরকার একটি শক্তিশালী শত্রুর অজুহাত। এই শত্রুর নাম দেয়া হলো রাশিয়া। সামরিক/নিরাপত্তা কমপ্লেক্স এবং তার অধীনে থাকা গণমাধ্যম ও রাজনীতিকরা রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বিশাল হুমকি আখ্যা দিয়ে খবর ছড়িয়ে দিতে থাকল, যেন তাদের নামে আসা এই অস্বাভাবিক বড় বাজেটকে ন্যায্য প্রমাণ করা যায়।

এর মাঝে এসে যদি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগড়া বসান, রাশিয়াকে চান বন্ধু বানাতে, সামরিক কমপ্লেক্স এবং তার এজেন্টরা তা হতে দেবে কেন?

রবার্টসের মতে, ট্রাম্প যেন পারমাণবিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ওয়াশিংটন-সৃষ্ট অস্থিরতা কমাতে না পারেন, সেজন্য সামরিক/নিরাপত্তা কমপ্লেক্স ‘রাশিয়াগেট’ নামের একটি নাটক সাজিয়েছিল।

বারবার বললে নাকি মিথ্যাকেও সত্য বলে মনে হতে থাকে। রাশিয়াগেট যে পুরোপুরি ভুয়া, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। কিন্তু অসংখ্যবার সত্য হিসেবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রচার করার ফলে বিষয়টি অনেকেই বিশ্বাস করে বসে আছেন।

এই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায়ই ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাটদের কম্পিউটার হ্যাক করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের দায়ে ১২ রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়।

১৩ জুলাই অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি মার্কিন সেনাবাহিনীর সাজানো বলে জোর দাবি রবার্টসের। কারণ এর মধ্য দিয়ে একদিকে রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে আবারও প্রমাণ করা যাবে; অন্যদিকে ‘রাশিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে’ – এমন কিছুও প্রমাণ হয়ে যেতে পারে।

শুধু তাই নয়, এরপর ১৮ জুলাই মারিয়া বুতিনা নামের এক সন্দেহভাজন রুশ গুপ্তচরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও ভুয়া বলে দাবি করেন সাবেক সহকারি অর্থমন্ত্রী পল ক্রেইগ। তার দাবি, এমনই অসংখ্য সাজানো ঘটনা ঘটিয়ে এসেছে সামরিক বাহিনী, যেন নিজেদের অবস্থান নিরাপদ রাখা যায়।

একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন দায়িত্বগুলোর একটি হলো অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েন কমিয়ে আনা, যা না কমালে এক পর্যায়ে পারমাণবিক যুদ্ধে গড়াতে পারে। কলামিস্ট রবার্টস অভিযোগ করে বলেন, মার্কিন সামরিক ব্যবস্থা তার পোষ্য রাজনীতিক ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে একজন প্রেসিডেন্টের এই নৈমিত্যিক কাজকে বড় ধরনের অপরাধে রূপ দিচ্ছে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পল ক্রেইগ রবার্টস বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে এ নিয়ে বহু সমালোচনা হয়েছে। ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে বৈঠকে আপত্তি জানিয়েছেন। বলা হয়েছে, রাশিয়া আমেরিকার শত্রু জেনেও ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। এটি রাষ্ট্রদ্রোহের চেয়ে কম কিছু নয় বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

‘দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করতে গিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এলো ট্রাম্পের ঘাড়ে!,’ বলেন রবার্টস।

রবার্টস নিজের দাবির পক্ষে কিছু সূত্রের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, কারো নিষেধ না শুনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে এবং সেখানে ভালো সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসে আমেরিকার ‘রাষ্ট্রদ্রোহী শত্রুর’ পরিচয় পেয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ কারণেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ফিনল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে সামরিক/নিরাপত্তা কমপ্লেক্সের চাপে বক্তব্য পাল্টে ফেলেছেন তিনি।

কিন্তু তারপরও শেষরক্ষা না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রবার্টস। তার মতে, মার্কিন সেনা কমপ্লেক্স তার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনার একটি একটি জট খুলছে আর বিদ্রোহ জোরদার হচ্ছে।

রবার্টস বলেন, ১৯৬১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার জনতার উদ্দেশে সর্বশেষ ভাষণে সাবধান করে বলেছিলেন, সেনা কমপ্লেক্স আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য বিরাট হুমকি। এ ধারাবাহিকতায় সাবেক সোভিয়েত নেতা ক্রুশচেভের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করা প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আততায়ীর হাতে নিহত হন।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সুসম্পর্ক ঠেকাতে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিও একই পক্ষের চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন রবার্টস। তার মতে, প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন একদিকে সোভিয়েতের সঙ্গে অনেকগুলো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করছিলেন, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের দরজা খুলে দিচ্ছিলেন। তাই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি সাজিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়েও একই ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পল ক্রেইগ রবার্টস। এবার যদি সামরিক পক্ষ সফল হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার গণতন্ত্র পুরোপুরি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।