ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ৪ লাখ ডলার ঘুষ!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক আয়োজন করে দেয়ার বিনিময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেংকোর কাছ থেকে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন ৪ লাখ ডলার গোপনে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিভের কয়েকটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রদের দেয়া তথ্য মতে, গত বছরের জুনে হোয়াইট হাউজে ওই বৈঠক আয়োজনের জন্য পোরোশেংকোর পক্ষ থেকে কয়েকজন মধ্যস্থতাকারী মাইকেল কোহেনকে ওই অর্থ পৌঁছে দেন। যদিও ইউক্রেনের বৈঠকের জন্য যোগাযোগ করতে মার্কিন আইন অনুযায়ী নিযুক্ত প্রতিনিধি কোহেন ছিলেন না।

ওই লেনদেনের বিস্তারিত জানিয়েছেন পোরোশেংকো প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি জানান, কোহেনকে অর্থ দেয়ার কারণ হলো, ইউক্রেনে নিবন্ধিত লবিস্ট বা ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের দূতাবাস থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পোরোশেংকোর একটি ছবি তোলা ছাড়া আর বেশি কিছুর সুযোগ পাবার আশা করা যাচ্ছিল না।

কিন্তু পোরোশেংকো আরও বেশি কিছু চাচ্ছিলেন। অর্থাৎ তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় যেতে আগ্রহী ছিলেন।

আর সেখানেই আসে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের প্রসঙ্গ।

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য অনুসারে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বৈঠক আয়োজনের জন্য বিকল্প পথ বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক সাবেক সহকারীকে তিনি এর দায়িত্ব দেন। ওই সহকারী আবার একজন বিশ্বস্ত ইউক্রেনিয়ান এমপির সহায়তা চান।

ওই এমপি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের একটি ইহুদি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে অবশেষে কোহেনের কাছে পৌঁছান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করিয়ে দেয়ার জন্য তাকে তখন ৪ লাখ মার্কিন ডলার দেয়া হয়।

তবে এই লেনদেনের বিষয়ে ট্রাম্প জানতেন, এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

কিভের দ্বিতীয় আরেকটি সূত্রও মাইকেল কোহেনকে ঘুষ প্রদানের একই বিবরণ দিয়েছে। তবে ওই সূত্রের দাবি, কোহেনকে ৪ নয়, ৬ লাখ ডলার দেয়া হয়েছিল।

মাইকেল কোহেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে এসব বক্তব্যের সমর্থনে কোহেনের আর্থিক হিসাবের কিছু তথ্য প্রমাণ বের করেছেন আরেক আইনজীবী মাইকেল অ্যাভেনাত্তি। তিনি পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের হয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে স্থানীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এক বিবৃতিতে কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ অভিযোগকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা, মানহানিকর আর সাজানো’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কেন এ বৈঠক পোরোশেংকোর কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় কিছু ব্যাপারে ইউক্রেনের নাম আসায় ট্রাম্পের সঙ্গে পোরোশেংকোর দেখা করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আর এজন্যই এত কাহিনী।

২০১৬ সালের অাগস্টে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের প্রচারণা ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্ট ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থিদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার নিয়েছিলেন।

ওই ঘটনা প্রকাশের পর ম্যানাফোর্ট পদত্যাগে বাধ্য হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পোরোশেংকো এ তথ্যটি ফাঁস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ তার ধারণা ছিল, হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। এ কথা শুনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আহত হয়েছিলেন এবং পরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্টও হন।

তাই ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিকঠাক করতে চাইছিলেন পোরোশেংকো। ওই বৈঠক শেষে দেশে ফিরে ইউক্রেনের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে ম্যানাফোর্টের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধেরও নির্দেশ দেন তিনি।