ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ কতোটা আছে ক্যাম্পাসে?

দীর্ঘ ২৮ বছর পরে আদালতের নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী মার্চ মাসের শেষের দিকে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে রকমই ধারণা দিচ্ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত। গত ১০ বছরে এ ছাত্র সংগঠনের প্রকাশ্য কোন তৎপরতা নেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

এমনকি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকের সময় ছাত্রদলের নেতারা প্রক্টরের সহায়তায় নিরাপত্তা নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছে। প্রতিপক্ষের হামলার আশংকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে।

সে কারণেই নির্বাচনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে কী না, সবগুলো ছাত্র সংগঠন সমান সুযোগ পাবে কী না – সে প্রশ্ন এখন অনেকে তুলছেন।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমান সুবিধা পাবে বলে উল্লেখ করেন উপাচার্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবগুলো ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহাবস্থান কতটা রয়েছে – সে প্রশ্নও জোরালো-ভাবে উঠছে।

কিন্তু উপাচার্য বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থানের কোন সমস্যা তারা দেখছেন না।

“প্রভোস্ট কমিটির সভায় প্রাধ্যক্ষবৃন্দ আমাদের একটি বিষয় অবহিত করেছেন সেটি হলো আমাদের হলগুলোতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আছে। হলে আমাদের বৈধ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। কেউ কোন প্রতিবন্ধকতা বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে বলে কোন অভিযোগ নেই” – বলেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল-মেহেদি তালুকদার বলছেন, “গত ১০ বছরে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। আমরা ক্লাস করতে পারি না, পরীক্ষাটা পর্যন্ত দিতে পারি না।”

তবে ছাত্রলীগের নেতারা এ অভিযোগ স্বীকার করেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনও তৎপর রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজনীতির মাঠে তাদের খুব একটা প্রতিযোগী মনে করে না।

ফলে বামপন্থীদের রাজনৈতিক তৎপরতায় খুব একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে না ছাত্রলীগ। কিন্তু বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর উপরও চড়াও হয়- এমন অভিযোগও রয়েছে।

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কেউ-কেউ মনে করছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থানের পরিবেশ নেই।

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, “আমি মনে করি এখানে আপাতত সহাবস্থান নেই। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম চালালেও ছাত্রদলের এখানে কোন কার্যক্রম নেই। ছাত্রদল তো কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়।”

বামপন্থী সংগঠনগুলো ছাত্রদল নিয়ে এতো চিন্তা করছে কেন? এমন প্রশ্নে উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, “শুধু ছাত্রদল না, প্রত্যেকটা ছাত্র সংগঠনকে তাদের কার্যক্রম চালাতে দিতে হবে। এটার দ্বারা সহাবস্থান বোঝায়। সহাবস্থান শুধু ছাত্রলীগ এবং বামপন্থী সংগঠনগুলো করবে, এ রকম না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে ছাত্রলীগের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য।

সম্প্রতি ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাবেশ করেছে। এমনকি তারা নানা দাবির কথা তুলে ধরেছে – যেটি অতীতে তাদের মুখ থেকে কখনো শোনা যায়নি।

ছাত্রলীগ মনে করছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক’ অবস্থা বিরাজ করছে।

“আমি আমার বন্ধু-প্রতিম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের কাছে আহবান জানাবো ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আপনারা প্রমাণ করুন যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আপনাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু রয়েছে” – বলছিলেন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

ছাত্রদলকে উদ্দেশ্য করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ক্যাম্পাসে এমন কি কোন ঘটনা ঘটেছে যে তারা কর্মসূচী পালন করতে এসেছে আর ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে?