ডুয়েটে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ, সম্পাদকসহ আটক ৬

গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুই দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও ২৩ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ছাত্র অসন্তোষের কারণে রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত এক জরুরি নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলার স্বার্থে সোমবার রাতের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রলীগের ডুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক বিনয় ব্যানার্জী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবুল হোসেন আকাশ ও হানিফ মাহমুদসহ ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নবঘোষিত কমিটির সভাপতি তায়েবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক বিনয় ব্যানার্জী সমর্থিত কর্মীরা মারমুখী অবস্থান করছিল।

সোমবার সভাপতি সমর্থিত কয়েক কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় গেট এলাকার দুজন ফটোকপি ব্যবসায়ীকে ক্যাম্পাসে ধরে নিয়ে চাঁদা দাবি করে। খবর পেয়ে সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত অপর কয়েক কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং আটককৃতদের ছেড়ে দেয়ার দাবি জানায়।

এনিয়ে দুগ্রুপের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত কর্মী ইইই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাদ্দাম হোসেন ও ওয়াফিক হোসেন এবং একই বর্ষের মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র মিজানুর রহমান মিঠুন আহত হন।

আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দিলে নির্ধারিত সময়ের কয়েক দিন আগেই রমজান ও ঈদ উপলক্ষে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে আগের দিনের ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তায়েবুর রহমানের সমর্থকরা কাজী নজরুল ইসলাম আবাসিক হলের পুরাতন ভবনে এবং সাধারণ সম্পাদক বিনয় ব্যানার্জী সমর্থকরা একই হলের এক্সটেনশন ভবনে অবস্থান নিয়ে মহড়া দিতে থাকে।

এ সময় তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং দুগ্রুপের মধ্যে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের দুটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার জন্য পুলিশ রাতে বিভিন্ন আবাসিক হলে অভিযান চালায়। রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত পুলিশের অভিযান অব্যাহত ছিল।

শিক্ষার্থীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ব্যানার্জীসহ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ছাত্রদের দুটি পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের কয়েক দিন আগেই রমজান ও ঈদ উপলক্ষে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী হল ত্যাগ না করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের হল ত্যাগের জন্য রাতে অভিযান চালায়।

জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুরে ভিসির সহযোগিতায় মুচলেকা নিয়ে আটকদের ছেড়ে দেয়া হয়। ওই ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি।