ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য গোপন করা হচ্ছে?

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গত জুন ও জুলাই মাসে শিশুসহ একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অথচ এ তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা কি তাহলে গোপন করা হচ্ছে।

গত ১৫ জুন রাজধানীর বসুন্ধরার এ্যাপোলো হাসপিটালসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১১ বছরের এক শিশু মারা যায়। ২৮ জুন রাজধানীর ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ দুটি মৃত্যুর খবর গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তে লিপিবদ্ধ ছিল না।

(১৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরে এ দুজনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচজনে দাঁড়াল। বেসরকারি হিসাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একজন মারা গেছেন বলে হাসপাতালটির পরিচালকের অফিস থেকে জানা গেলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত পরিসংখ্যানে সে তথ্য দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ফরিদপুরে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার মেয়ে (একটি শিশু) এবং রাজধানীতে পরিবেশ অধিদফতরের এক কর্মকর্তার মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের বরাত দিয়ে ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা জানিয়েছেন। কিন্তু সেই তথ্যও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। কিন্তু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে তা নিশ্চিত করার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেথ রিভিউ কমিটি রয়েছে। তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে- এমন তথ্য পেলে সরেজমিন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে। তবেই ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। তখন ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের মধ্যে চলতি জুলাই মাসেই (১৭ জুলাই পর্যন্ত) ৩ হাজার ৮১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মেতে ১৯৩ ও জুনে ১ হাজার ৭৬১ জন আক্রান্ত হন। চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পাঁচজনের মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ২ ও জুলাই মাসে একজন মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ২১৭ জন ডেঙ্গজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।