ডেঙ্গু-বন্যায় বিষাদের ছায়া এবার ঈদ আনন্দে

পবিত্র ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা করেছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১২ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। তবে এবারের ঈদে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু ও বন্যার ব্যাপক ক্ষতি।

ধারণা করা হচ্ছে, এই দুই কারণে এবারের ঈদ আনন্দ কিছুটা উদ্বেগের মধ্য দিয়েই যাবে। ডেঙ্গু ও বন্যার কারণে বিষাদের ছাপ পড়বে এবারের ঈদ আনন্দে। পরিবার-পরিজন নিয়ে যারাই গ্রামে ঈদ করতে যাবেন, তাদের মধ্যে ডেঙ্গুর আতঙ্ক থাকবে।

অন্যদিকে চলমান বন্যার কারণে দেশের ২৮টি জেলার কোনোটির আংশিক এবং কোনোটি পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। সরকারি হিসাবেই ৭৫ জনের প্রাণহানির কথা বলা হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরো বেশি হবে। লক্ষাধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বন্যায়। ফলে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে অনেক পরিবারের। তারাও ঈদের আনন্দ থেকে স্বাভাবিকভাবেই বঞ্চিত হবেন।

সরকারি-বেসরকারি সূত্র বলছে, চলতি আগস্টে এডিস মশার উপদ্রব আরো বেড়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে দেশের সব জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্তে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়েকটি জেলায় মারাও গেছেন কয়েকজন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন এরই মধ্যে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, যারা ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন তারা সতর্কভাবে যাবেন। আর প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে দেওয়া বার্তায় জানিয়েছেন, যারা ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন, তারা রক্ত পরীক্ষা করে যাবেন।

গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, ঈদে যারা ঢাকা ছাড়তে চান, তাদের রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যারা ঈদ উদযাপন করার জন্য ঢাকার বাইরে যাবেন, তারা যেন রক্ত পরীক্ষা করে যান। কারণ তারা যদি ডেঙ্গু নিয়ে বাইরে যান, তাহলে ঢাকার বাইরে এটি অনেক বেশি বিস্তার লাভ করবে।

সূত্র বলছে, মশার প্রকোপ শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মশা মারার জন্য ওষুধ আনার চেষ্টা চলছে। তবে খুব দ্রুত ওষুধ আনতে ব্যর্থ হচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন।

এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রণে আসবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। আর কার্যকর পদক্ষেপের জন্য করণীয় ঠিক করতে কলকাতার বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

অপরদিকে, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকানোর কার্যকর কোনো সংস্থা নেই বললেই চলে। ঢাকার বাইরে চিকিৎসা পাওয়াও কঠিন। ফলে হয়তো অনেকেই ঢাকার বাইরে যেতে সাহস করবেন না। আর সরকারও সেটি নিরুৎসাহিত করছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কেউ বিনা চিকিৎসায় হাসপাতাল ছাড়েনি। আমরা আরো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। তবে এর আগে আমাদের নজর দিতে হবে ডেঙ্গুর প্রকোপ যাতে না বাড়ে সেদিকে। এ জন্য সরকারের সংস্থাগুলোকে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, জনমনে যে ভয় তৈরি হয়েছে তার প্রভাব হয়তো পড়বে ঈদ উদযাপনে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা থেকে যারা গ্রামে যাবেন, তাদের মধ্যে একটা অংশ কোনো না কোনোভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এদের মধ্যে কারো হয়তো জ্বর থাকবে, আবার কারো হয়তো তখনো জ্বর থাকলেও পরে জ্বর হতে পারে। তাই এটা প্রতিরোধে কারো জ্বর থাকলে তিনি যেন ভ্রমণ না করেন। জ্বর থাকলে যেন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন সেটা ডেঙ্গু কি না। আবার কারো হয়তো তখনো জ্বর হয়নি কিন্তু ইতোমধ্যে তার শরীরে ডেঙ্গুর জীবন ঢুকেছে। জ্বর না হওয়ায় তিনি তা টের পাননি। তিনি হয়তো চলে যাবেন। সেখানে তিনি চিকিৎসাসেবা পাওয়া কষ্টকর হতে পারে।

অন্যদিকে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় দেশের ২৮টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। লক্ষাধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাই শুরু করতে পারেনি। কারণ এখনো অনেক এলাকা পানির নিচেই রয়েছে। সর্বস্ব হারিরেছে অনেক পরিবার। এবার কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত। ফলে ধান বিক্রি করেও তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না। ফলে ধর্মীয় বড় এই অনুষ্ঠানে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে থাকবে বিষাদের ছাপ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, মশা নিধন ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সরকার এখন মশার ওষুধ আমদানি করবে। এরপর ওষুধ দেওয়া হবে। ওষুধ আনার পর ঠিকমতো কাজ শুরু করলেও সাত দিন অপেক্ষা করতে হবে। এসব কাজ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।