ঢাকায় গাড়িমুক্ত জীবনে আগ্রহী না গাড়ির মালিকরা

পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত দিক মাথায় রেখে ‘কার ফ্রি ডে’ বা ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের ধারণা শুরু হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থায় আগ্রহী করা।

কিন্তু ঢাকার মত শহরে এরকম ধারণা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?

ঢাকার সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর একটা অংশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে শনিবার নানা ধরণের আয়োজন করা হয়েছিল ওয়ার্ল্ড কার ফ্রি ডে বা গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্যে। নানা আকৃতি ও রংয়ের বেলুন, পোস্টার, ব্যানারে সাজানো হয়েছিল সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা। বিভিন্ন শিশু সংগঠনের সদস্যরা নাচ, গান, ছবি আঁকা – এমন অনেক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করেন।

তবে পুরো আয়োজনটিকে লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা বললে খুব একটা ভুল হবে না, কারণ অন্যান্য দিনের তুলনায় ঢাকার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কোনো অংশে কম ছিল না।

গণপরিবহন ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সাইকেল চালানো বা হাঁটার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সত্তরের দশক থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয় গাড়িমুক্ত দিবস।

ঢাকায় কেন গণপরিবহন ব্যবহার করতে চায় না মানুষ?
ঢাকার মত শহরে গণপরিবহণ ব্যবহারে বা পায়ে হেঁটে পথ চলায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাটা কতটা বাস্তবসম্মত?

ঢাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত নুসরাত আমিন বলেন, “ঢাকায় গণপরিবহনের অবস্থা এমন যে মানুষ বাধ্য না হলে গণপরিবহন ব্যবহার করে না।”

নারী হিসেবে ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবহার করা বা রাস্তায় হেঁটে চলাচল করাও বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেন মিজ. আমিন।

“হাঁটাপথে আমার বাসা থেকে অফিস যেতে ২০ মিনিট লাগে। কিন্তু ঐটুকু হাঁটার মধ্যে পথের মানুষের কাছ থেকে যত ধরণের বাজে মন্তব্য শুনতে হয় এবং নিজেকে রক্ষা করে সতর্কতার সাথে চলতে হয়, তাতে আর পরদিন হাঁটার ইচ্ছাটা অবশিষ্ট থাকে না”, বলেন মিজ. আমিন।

এছাড়া নারী হিসেবে সন্ধ্যার পর রাস্তায় হেঁটে চলাচল করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বলেও জানান মিজ. নুসরাত আমিন।

বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু গণপরিবহণ ব্যবস্থা পরিবর্তন ও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঢাকার মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা কমানো সম্ভব নয়, কাজ করতে হবে নাগরিকদের মানসিকতা পরিবর্তনে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক শাম্মী আকতার মনে করেন গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি কম ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ।

“শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হলে মানুষ ধীরে ধীরে গণপরিবহন ব্যবহার শুরু করবে এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কম হবে”, বলেন মিজ.আক্তার।

বেশি পরিমাণ গাড়ি বিক্রি হওয়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নির্দেশক – এই বক্তব্যের বিপরীতে মিজ আক্তার বলেন সামাজিক ও মানসিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হলে প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

“যে শহরে প্রতিদিন অসংখ্য কর্মঘন্টা নষ্ট হয় ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে, বায়ুদূষণে হাজার হাজার মানুষ মারা যায় এবং শেষপর্যন্ত কাজেও সময়মতো যাওয়া যায় না – সেখানে শুধু অর্থনৈতিক দিকটা বিবেচনা করে প্রবৃদ্ধি হিসাব করা উচিত নয়।”

সচেতনতা তৈরি ও প্রচারণার পাশাপাশি, গাড়ি আমাদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে বা জ্বালানির মূল্য বাড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন মিস আক্তার।

-বিবিসি বাংলা