ঢাকার বর্জ্য অপসারণে মাঠে নেমেছে ১৪ হাজার কর্মী

কোরবানির পর সৃষ্ট হওয়া পশুর বর্জ্য অপসারণে সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীজুড়ে কাজে নেমেছে প্রায় ১৪ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে এবার এ ব্যবস্থা নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন।

রোববার (১১ আগস্ট) ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার (১০ আগস্ট) রাতের মধ্যেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পৌঁছে গেছে বর্জ্য বহনকারী ব্যাগ, বস্তা, ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইলসহ অন্য যাবতীয় জিনিস। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে বর্জ্য অপসারণের জন্য বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ভ্যান, ছোট পিকআপ থেকে শুরু করে বড় ট্রাক আছে এসব যানবাহনের মধ্যে।

সোমবার দুপুর ২টায় উত্তরা থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। অন্যদিকে দুপুর পৌনে ৩টায় ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা মাঠের সামনের জায়গা থেকে নিজ এলাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন।

ডিএনসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মঞ্জুর হোসেন জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডিএনসিসিতে এবার প্রায় ছয় হাজার কর্মী কাজ করবে। এদের মধ্যে ডিএনসিসির নিয়মিত কর্মী প্রায় আড়াই হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পিডাব্লিউসিএসপিএর প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী বর্জ্য অপসারণে কাজ করবে।

অন্যদিকে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন জানান, তাদের নিয়মিত কর্মী পাঁচ হাজার ২শ ৪১ জন। সঙ্গে থাকছে পিডাব্লিউসিএসপিএর প্রায় তিন হাজার কর্মী। এছাড়াও দ্রুততম সময়ে বর্জ্য অপসারণে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকছে দুই সিটিতেই। সব মিলিয়ে ১৪ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবার থাকছে রাজধানীতে কোরবানি হওয়া পশুর বর্জ্য অপসারণ মিশনে।

এদিকে নিজেদের এলাকা থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। অন্যদিকে আগে থেকে সময় বলার থেকে কাজ করে দেখাতে বিশ্বাসী উত্তরের নগরপিতা আতিকুল ইসলাম। দুই সিটি করপোরেশনে এবার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোরবানির পশু জবাই হওয়ার অনুমান করছে সংস্থা দু’টি। গতবছরের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় এক লাখ বেশি।

একই সঙ্গে ঈদুল আজহার প্রথম দিনেই প্রায় ১৮ লাখ টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে এমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই সেগুলো অপসারণে ছক কষেছে দুই সিটি।

নিজেদের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, দ্রুতসময়ে বর্জ্য অপসারণের জন্য আমাদের নিজস্ব লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের পাশাপাশি আমরা আউটসোর্সিং করেছি এবার। ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী দু’দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক ও খোলা ট্রাক ১৬৯টি, ভারী যান-যন্ত্রপাতি ২৮টি, পানির গাড়ি ১১টি, বেসরকারি ৮২টি এবং ভাড়ায় ১৪৮টি পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৪৩৮টি গাড়ি নিয়োজিত থাকবে। কোরবানির পশুর বর্জ্যে যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে জবাইয়ের স্থানে ১০টি ওয়াটার বাউজার দিয়ে তরল জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রেকরণের ব্যবস্থা থাকছে এবার।

আতিক আরও বলেন, শহর থেকে শুধু বর্জ্য সংগ্রহ করলেই চলবে না বরং সেগুলোকে ডাম্পিংয়েরও একটি ব্যাপার থাকে। এরজন্য এবার আমরা ল্যান্ডফিলগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৪০ ফুট বাই ৩০ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের দু’টি পরিখা খনন করা হয়েছে এবং দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাসহ অতিরিক্ত যান-যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ড্রেসিং কার্যক্রমে ছয়টি বুলডোজার, তিনটি চেইন এস্কেভেটর, দু’টি লং আর্ম এস্কেভেটর ও দু’টি হুইলডোজার নিয়োজিত রাখা হবে। প্রতিটি বাড়ি থেকে দ্রুত বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য পর্যাপ্ত ভ্যান সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোরও ব্যবস্থা করা হবে।

তবে সিটি করপোরেশনের এতসব উদ্যোগ সার্থক হবে যদি নগরবাসী সচেতন হন এবং সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করেন। এমনটা মনে করে আতিক বলেন, আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করেছি কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য। আমরা বলেছি, নগরবাসী যদি এখানে পশু নিয়ে আসেন তাহলে তাদের বাড়িতে বাড়িতে গাড়ি দিয়ে মাংস বিনামূল্যে পৌঁছে দেবো। বিষয়টিকে একটা পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নিয়েছি। নগরবাসীর সাহায্য চাই। তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যে, তারা যেন যেখানে পশু কোরবানি না দেন; পশুর বর্জ্য যেন ফেলে না রাখেন।