ঢাকায় তিন দিন ধরে ডিবি কার্যালয়ে আটক ১১ শিক্ষার্থী

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে তিন দিন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে। তাঁদের কী কারণে আটকে রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কে পরিবারকে কিছু জানানো হয়নি বলেও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি। ওই ১১ শিক্ষার্থীর ছয়জন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের, অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, তিতুমীর কলেজ, করটিয়ার সরকারি সা’দত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী রয়েছেন। আটক শিক্ষার্থীরা হলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির ছাত্র মুজাহিদুল ইসলাম, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইফতেখার আলম, জাহাঙ্গীর আলম, রায়হানুল আবেদিন ওরফে জুয়েল, তারেক আজিজ, মাহফুজ আহমেদ, মেহেদী হাসান, করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজের ছাত্র সাইফুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম ওরফে হাসিব ও আল আমিন ও বোরহানউদ্দীন। খবর প্রথম আলো’র।

সূত্রগুলো বলছে, ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও বিজি প্রেস এলাকা থেকে ৩১ জনকে তুলে নিয়ে যায়। এক দিন পর ১১ জনকে আটকে রেখে বাকিদের মুচলেকা নিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি অফিস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির ছাত্র মুজাহিদুল ইসলাম ডিবি অফিসে আটকে আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা মাহবুব আলম। গতকাল বিকেলে তিনি বলেন, ছেলের মেস থেকে একজন ফোন করে তাঁকে জানান, ভোরবেলা ডিবি এসে মুজাহিদকে নিয়ে গেছেন। ঝিনাইদহ থেকে লোকজনের পরামর্শে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে যান। গিয়ে দেখেন, আরও অনেক অভিভাবক ডিবি অফিসের গেটে ভিড় জমিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর তাঁদের কয়েকজনকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। পুলিশ তখন তাঁদের আশ্বস্ত করেন যে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেলেদের ছেড়ে দেওয়া হবে। বিকেল নাগাদ দু-তিনজন করে বের হতে শুরু করলেও তাঁর ছেলে আসেননি। পুলিশ তাঁকে আদালতে যোগাযোগ করতে বলে। তবে শনিবার পর্যন্ত আদালতে ছেলেকে পাঠানো হয়নি। মাহবুব আলম আরও জানান, রোববার ছেলের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল।

সারাদিন ডিবির ফটকে অপেক্ষা করেও ছেলের কোনো খবর না পেয়ে এনামুল হক তেজগাঁ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যান। থানা জিডি নেয়নি। এনামুল হকের ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে হাসিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন।

এই শিক্ষার্থীদের কেন আটকে রাখা হয়েছে, কাউকে কাউকে কেন এক দিন আটকে রেখে ছেড়ে দেওয়া হলো, সে সম্পর্কে কোনো খবর পাচ্ছে না পরিবারগুলো। তবে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন এমন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেছেন, পুলিশ সন্দেহের বশে তাঁর আত্মীয়কে আটকে রেখেছিল। আটকে রেখে কী জিজ্ঞাসা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ই পুলিশ চড়-থাপ্পড় মারে। জানতে চায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক, সাথি না কর্মী। প্রশ্ন করা হয় তাঁর বেশভূষা নিয়েও। কোটা সংস্কার আন্দোলন বা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সম্পৃক্ততা ছিল কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। খোঁজখবর শেষ হওয়ার পর তাঁর আত্মীয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুচলেকায় কী লেখা ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁকে কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। তবে যত দূর মনে পড়ে, সরকারবিরোধী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন—এই সন্দেহ থেকে আটক করা হয়েছিল—এমন ধরনের কিছু একটা লেখা ছিল।

তেজকুনিপাড়ার ইউসুফ কুটির থেকে ডিবি পুলিশ ১২ জনকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। এখানে শিক্ষার্থীরা কয়েকজন মিলে থাকেন। ইউসুফ কুটিরের একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোরবেলায় হাতকড়া পরা এক ব্যক্তিসহ ৮/১০ জন পুলিশ সদস্য ইউসুফ কুটিরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। পুলিশের কাছে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল না। তবে আটক করার সময় পুলিশের কথাবার্তা শুনে তাঁর মনে হয়েছে, ওই শিক্ষার্থীরা জামায়াত-শিবির করে বলে পুলিশ ধারণা করছিল। ওই বাসা থেকে আটক শিক্ষার্থীদের বড় অংশই পরে ছাড়া পায়। ভয়ে তারা ইউসুফ কুটির ছেড়ে চলে গেছে। গতকাল বিকেলে ইউসুফ কুটির থেকে এক শিক্ষার্থীর বড় ভাইকে মালামাল নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। তিনি জানান, ছোট ভাইকে তিনি অন্য একটি বাসায় তুলে দিয়েছেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে চলে যাবেন। তাঁর ভাই মাত্র দুই মাস আগে ইউসুফ কুটিরের মেসে উঠেছিলেন। পড়েন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, দ্বিতীয় বর্ষে।