ঢাকা থেকে মুম্বাইয়ে এখনও সালমানকে অনুসরণ করা হয়

সালমানের চুলের কাটিং, ক্যাপ, পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা, বাচনভঙ্গি- সবই নতুনদের জন্য অনুকরণীয়। অন্তত এখনও সেটাই দেখা যায়। ঢালিউড তারকারা তো বটেই বলিউডেও সালমানকে অনুসরণের ঘটনা অহরহ। ঢাকাই ছবির সালমান শাহকে অনেকবারই বলিউডের সালমান খান অনুকরণ করেছেন। বিভিন্ন সময় খবরে এসেছে।

২০১৫ সালের বছরের ১৩ অক্টোবর সেখান থেকে একটি ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। ‘প্রেম পিয়াসী’র সালমানের একটি ছবির সঙ্গে শাকিবের এ ছবিটি হুবহু মিলে যায়। হেয়ার কাটিং, কানের দুল, তাকানোর স্টাইল- সবই সালমানের মতো। তবে সালমান শাহ চুলে রং করেননি। কিন্তু শাকিব চুল রাঙাতে ভুলেননি।

এ ছাড়া শাকিব বলেন, ‘সালমান শাহ আইকন। মাঝেমধ্যে তাঁর অনুকরণ করাটা দোষের কিছু নয়। তবে এই লুকটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই তার সঙ্গে মিলে গেছে। পরে দুটি ছবি দেখে নিজেই বিস্মিত হয়েছি। অবশ্য ভেতরে ভেতরে এক ধরনের ভালো লাগাও কাজ করেছে।’

এ দিকে ‘মেন্টাল’ টিম বলছে, এটা পূর্বপরিকল্পিত নয়। সালমান শাহর হেয়ার স্টাইলের সঙ্গে শাকিব খানের হেয়ার স্টাইল কাকতালীয়ভাবে কিছুটা মিলে গেছে। সালমান ও শাকিব দুজনের ভক্তরাই বিষয়টি উপভোগ করছেন।

২০১৪ সালে বলিউডের আশিকি টু চলচ্চিত্রের নির্মাতা শুটিং সেটে নায়ক আদিত্য রায় কাপুরকে চরিত্র বুঝিয়ে দিতে গিয়ে বলছিলেন, ‘তোমাকে আমি বাংলাদেশের প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর লুকে চাই। সালমানের স্টাইলগুলো ফলো করো।’ পরবর্তীতে সালমান শাহ অভিনীত কিছু সিনেমার ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয় আদিত্যকে। এ খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

সালমান যেসব স্টাইল চালু করে গেছেন নব্বই দশকের শুরুতে সেসব স্টাইল অতি সম্প্রতি সালমান খান, আমিরখানসহ ভারতীয় সুপারস্টারদের মধ্যেও দেখা গেছে। ভক্তদের ময়তে- এসবকে গুলোকে কাকতালীয় বলার সুযোগ নেই, অনুকরণ।

সালমান শাহ তার একটি ছবিতে কপাল ঢেকে রাখা ব্যান্ডেনা পরেছিলেন। ২০১৪ সালে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবিতে শাহরুখ খানও অবিকল সেভাবেই ব্যান্ডেনা ব্যবহার করেন। ১৯৯৫ সালে সালমান শাহ গলায় যেভাবে আরবীয় রুমাল প্যাঁচিয়েছিলেন, ২০১২ সালে এসে ‘এক থা টাইগার’ ছবিতে সালমান খান সেটা অনুসরণ করেছেন বলে দাবি ভক্তদের।

১৯৯৫ সালে পুলিশি পোশাক ও টুপিতে যে ধরনের রোদচশমা আর গোফ রেখেছিলেন সালমান শাহ, ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দাবাং’ ছবিতে প্রায় একই সাজে দর্শকদের সামনে আসেন সালমান খান। ২০১৩ সালে ‘ধুম থ্রি’ ছবিতে ও এর প্রচারণা অনুষ্ঠানগুলোতে আমির খান যে হ্যাট পরেছেন, তা সালমান শাহ পরতেন বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভক্তরা।

২০০৩ সালে ‘তেরে নাম’ ছবিতে বড় চুলে ঠোঁটের এক কোণে সিগারেট রেখে ঘাড় তাক করে সালমান খানের তাকানোকে সালমান শাহর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারতের ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা দেবও সালমান শাহকে অনুসরণ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সালমানের পরা একই রকম নকশার একটি কটি গত বছর ‘হিরোগিরি’ ছবির গানে অভিনয়ের জন্য পরেছিলেন দেব।

সালমান শাহের মাথায় কাপড় বাঁধা স্টাইল সে সময় এতটাই জনপ্রিয় হয়ে যায় যে পাড়া মহল্লার তরুণদের মাথায় কাপড় বাঁধায় হিড়িক পড়ে যায়। সালমান নব্বইয়ের দশকে যে ফ্যাশন সচেতন ছিলেন তা যে অনুকরণীয় তা প্রজন্মের ফ্যাশন সচেতন তরুণদের দেখলেই বোঝা যায়।

অনেকের মতেই সালমান শাহ এমন একজন অভিনেতা ছিলেন যিনি যেকোনো স্টাইলই মানিয়ে নিতেন। অনেকে সালমান শাহকে অনুকরন করেন। এমন কি বলিউডের অভিনেতারা পর্যন্ত সালমান শাহের স্টাইল অনুকরণ করেন। কিন্তু সালমান শাহের মতো হয় না। সালমান শাহ একটাই হয়, দুটি নয়, হয়ত হবে নাও কোনোদিন।

সালমান তখন স্ত্রীকে নিয়ে পারিবারিক সফরে মুম্বাই গিয়েছিলেন। তখন শাহরুখই সালমানের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। শাহরুখ খানের বলিউডে অভিষেক হয় ‘দিওয়ানা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৯২ সালে। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক হয় সালমান শাহর। প্রথম ছবিতেই আকাশছোঁয়া সাফল্য পান সালমান। কিন্তু শাহরুখকে জনপ্রিয় হতে অপেক্ষা করতে হয় আরও কয়েক বছর।

সাম্প্রতিক সময়েও পোড়ামন- ২ ছবির গল্পে আবর্তিত হয়েছে সালমানের স্টাইল। অভিনেতা সিয়ামকে দেখা যায় সালমান ভক্ত হিসেবে। যেখানে সালমানের ফ্যাশন অনুকরণ করেন।