ঢাকা-ময়মনসিংহের ১২ কিলোমিটার বিপদ

এবারও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার যানজটের কবলে পড়তে হবে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের। স্থানীয়রা এ যানজটের জন্য ৭টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিলেও রমজানের শেষ দিকে এসে প্রশাসনের নেয়া সব ব্যবস্থাই যেন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

ঢাকা থেকে যেসব যাত্রী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে বাড়ি ফিরবেন তাদের মাথায় চিন্তার কারণ কেবল গাজীপুরের যানজট। আব্দুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে পথেই বসে থাকতে হচ্ছে।

অপরদিকে এ মহাসড়কে সালনা থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেগে থাকছে নজিরবিহীন যানজট। পাঁচ কিলোমিটার পথ আসতে সময় লাগছে ২ থেকে তিন ঘণ্টা। আসছে ঈদে এ মাত্রা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও যাত্রীরা।

ভাঙাচোরা রাস্তা

এ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মহসড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত রয়েছে। সড়ক বিভাগ এগুলো মেরামতের চেষ্টা করলেও পরক্ষণেই ফের গর্ত হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এজন্য সড়ক বিভাগ অতিবর্ষণকেই দায়ী করছে।

উন্নয়ন প্রকল্পের চলমান কাজ

গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের পাশে চলছে ড্রেন নির্মাণ ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। এগুলোর কারণে মহাসড়কে নিত্য যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ও ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় ফ্লাইওভার ও ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া বিআরটিএ প্রকল্পের নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের অনেক স্থান এক লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীর গতিতে চলছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে গাড়ির লম্বা সারি।

এছাড়া বিআরটি প্রকল্পের কাজের মহাসড়কের পাশে মূল ড্রেনের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে মহাসড়কের ওপর এস্কেভেটর বসিয়ে বিকল্প ড্রেন স্থাপন করার সময় মাটি ও ময়লা মহাসড়কের ওপর রাখার কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

বিকল্প রাস্তার অভাব

উন্নয়ন প্রকল্পের এসব নির্মাণ কাজ করার আগে ওই এলাকায় বিকল্প কোনো রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। ওভারব্রিজ ও বিআরটিএ প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সিটি কর্পোরেশনের সালনা ব্রিজ থেকে শিববাড়ি, সার্ডি রোড থেকে বাইপাস সড়ক এবং জয়দেবপুর থেকে টঙ্গীর বনমালা এলাকা পর্যন্ত বিকল্প সড়ক নির্মাণ বা সংস্কার কাজ করার প্রস্তাবনা থাকলেও বাস্তবে তা না হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

রাস্তায় বৃষ্টির পানি

মহাসড়কের টঙ্গী বাজার, বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড এবং চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে রাস্তায় ছোটবড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

এ রোডে চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, টঙ্গী কলেজগেট থেকে ভোগড়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায়। সেখানে পানি জমে থাকায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোটবড় গর্তও হয়েছে।

রাস্তায় অবৈধ দোকান

মহাসড়কের পাশে জলাবদ্ধতা, অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসানোর কারণেও মহাসড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। চান্দনা-চৌরাস্তা, ছয়দানা ও সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাড়কের পাশের ফুটপাত ও মহাসড়ক দখল করে অবৈধ বাজার বসে। এ কারণে মহাসড়ক সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং পথচারীরা মহাসড়কে চলতে গিয়ে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়, সৃষ্টি হয় যানজট।

রাস্তাতেই গাড়ি পার্কিং

নগরীতে রাস্তার আশপাশে যেসব গার্মেন্টস আছে তাদের গাড়ির জন্য নিজস্ব কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। গার্মেন্টসের পণ্যবাহী গাড়িগুলো রাস্তার পাশে পার্কিং করা হয়। চান্দনা চৌরাস্তার পশ্চিমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে ছোটবড় রড-সিমেন্টের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের সামনে বড় বড় গাড়ি থামিয়ে রড-সিমেন্ট লোড-আনলোড করতে গিয়েও মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।

মহাসড়কে অবৈধ যান

গাজীপুরের ভয়াবহ যানজটের মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে অবৈধ থ্রি-হুইলার বা ইজিবাইক। অসংখ্য ইজিবাইকের কারণে অনেক সময় অন্য গাড়ি চলাতো দূরে থাক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নড়তেও পারে না।

গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ছয়দানা, চান্দনা-চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় ড্রেন নির্মাণ, মহাসড়কের ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু করার কারণে মহাসড়কের প্রশস্থতা কমে গেছে। কাজ চলমান থাকলে এক লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করে।

তিনি আরও জানান, মহাসড়কে ৩২টি স্থানে কাটা স্থান আছে যেখানে গাড়িগুলো ইউটার্ন করে। আর ইউটার্ন করতে গিয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা, সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোটবড় গর্ত, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়ক দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় প্রতিদিন যানজট হয়। তবে যানজট নিরসনে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।