ঢাবিতে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর কীভাবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের অবস্থান ও প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেও এই সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করা হবে বা আদৌ সম্ভব কি না, এ নিয়ে জানে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশের পর প্রতিবাদ, টিপ্পনি আর কৌতুকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা হয় । তিনি জানাতে পারেননি সুনির্দিষ্ট কোন কৌশলে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন তারা।

বহিরাগতদেরকে কীভাবে ঠেকাবেন-জানতে চাইলে প্রক্টর রব্বানী বলেন, ‘আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করব। তবে আমাদের প্রথম অনুরোধ হল যারা বহিরাহত তারা নিজ দায়িত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা হতে বিরত থাকবে।’

‘কারণ ইতিমধ্যে আমরা তাদের নিকট ম্যাসেজ পাঠিয়েছি। এরকম পারস্পরিক সহযোগিতা থাকলে আমাদের অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে না।’

হলের বিষয়ে জিজ্ঞেস প্রক্টর বলেন, ‘হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। সেই অনুসারে তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

তবে বহিরাগতদের বিষয়ে নির্দেশনা আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান ছাত্র ছাড়াও বহু মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেন্দ্রে এটা আদৌ যৌক্তিক কোনো সিদ্ধান্ত কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

তা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহরের এমন একটি এলাকায় অবস্থিত যা এর পাশের লোকালয়ে বসবাসকারীদের যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হয়। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে না পারে তাহলে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করবে।

আবার দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের জন্যও ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়েই যেতে হয় নগরীর একাংশের মানুষদের। যদি তারা ঢুকতে না পারেন, তাহলে তার প্রভাব ব্যাপক ক্ষতিকর হতে পারে।

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়মিত নানা কর্মসূচি পালন করে। সবুজের অভাবে ভোগা নগরবাসীর, সাবেক ছাত্রদের বৈকালিক বা সন্ধ্যার আড্ডার পছন্দের জায়গাও এই বিশ্ববিদ্যালয়।

আবার বহিরাগত কারা, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একজন শিক্ষক। ছাত্র-শিক্ষক আর কর্মচারী ছাড়া বাকি সবাই যদি বহিরাগত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও ছন্দপতন হবে। কারণ, ছাত্রদের প্রয়োজনীয় নানা উপকরণ আর খাবার বিক্রির জন্যও বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন যান ক্যাম্পাসে। আবার ছিন্নমূল বহু মানুষের আশ্রয়ও এই বিশ্ববিদ্যালয়। নানা সংগঠনের মানবিক বহু কাজের প্রচারও হয় এখানেই। এরাও যদি বহিরাগত হয়, তাহলে ছাত্রদের খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে আশেপাশের মার্কেটে যেতে হবে। এতে সময়ের পাশাপাশি হবে অর্থের অপচয়ও।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা কয়েকজন নেতার ওপর হামলা হয়েছে দুই দফা। এরপর প্রতিবাদে সোচ্চার শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে প্রক্টর গোলাম রব্বানী ও উপাচার্য আখতারুজ্জামানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দুই দফা হামলার পর প্রক্টর জানিয়ছেন, তিনি কিছু জানেন না। আর উপাচার্য বলেছেন, তিনি অনলাইনে তালেবান জঙ্গিদের ঢংয়ে ভিডিও দেখেছেন যারা জীবন দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

এর মধ্যে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক আদেশ জারি করে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের অবস্থান ও চলাচল নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। আর এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় এটা পারে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরাই।

বহিরাগত কারা?

আন্তর্জাতিক সম্পদ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চেয়ছেন বহিরাগত কারা।

এই শিক্ষক বলেন, ‘যখন বিশ্ববিদ্যালয় এই বিজ্ঞপ্তি দেন তখন তাদের সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে কারা বহিরাগত। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে বহিরাগতদের কোন সংজ্ঞা নেই । তার মানে বুঝতে হবে এইখানে কর্তৃপক্ষের কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে।’

‘এটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। জনগণের টাকায় চলে। তাই সবার অধিকার আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। বহিরাগত বলে কোন কথা নেই৷ কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অন্য পদক্ষেপ নিতে পারে।’

তানজীম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কারা অস্থিরতা সৃষ্টি করে, কারা ছিনতাই করে, মারামারি করে, সেটা প্রশাসনের অজানা নয়৷ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আগে তাদের বিচার করতে হবে। আর তাদের চোঁখ ফাকি দিয়ে ক্যাম্পাসে কিংবা হলে জঙ্গিরা আস্তানা গাড়বে এটি বিশ্বাস করা যায় না।’

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উপাচার্য করা অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীও মনে করেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত বুদ্ধির চর্চা কেন্দ্র এবং উন্মুক্ত প্রান্তর। এই উন্মুক্ত প্রান্তরে রেস্ট্রিকশন (নিয়ন্ত্রণ) আরোপ করে বেশিদিন রাখা যাবে না। তাই আশা করব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অতিদ্রুত এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করবেন।’

‘উপাচার্য তার ওপর হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে সেটা স্থায়ী হবে না।’