ঢামেকের চার কোটি টাকা তিন কর্মকর্তার পকেটে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁরা রোগীদের কাছ থেকে ফরম ও টিকিট বিক্রি, ক্যানটিন ভাড়া ও হাসপাতালের কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের বিদ্যুৎ বিলের টাকাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা হাসপাতালের ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি।-খবর প্রথম আলো’র।

এই তিনজন হলেন হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এম এম আরিফুর রহমান, অফিস সহকারী কাম ক্যাশিয়ার মো. আলমগীর হোসেন ও জরুরি বিভাগের টিকিট ক্লার্ক (ইনচার্জ) আজিজুল হক ভূঁইয়া। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ আজিজুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। কর্তৃপক্ষ আরিফুর রহমানকে তিন দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে।

হাসপাতালের নথিপত্র দেখে এবং কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফুর রহমান, আলমগীর হোসেন ও আজিজুল হক ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় করা টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি। আরিফুর আগে হাসপাতালের স্টোরকিপার ও আলমগীর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে আরিফুর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এবং আলমগীর অফিস সহকারী কাম ক্যাশিয়ার হন। তিনজনই রোগীর কাছ থেকে ফরম ও টিকিট বিক্রির টাকা, ক্যানটিন ভাড়ার টাকা, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে কেটে রাখা আয়করের টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তাঁরা হাসপাতালের কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের বিদ্যুৎ বিলের টাকাও ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি।

আরিফুর রহমানের বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই পৌরসভার মোকামটোলায়। সেখানে গেলে স্থানীয় দোকানদার জাহাঙ্গীর আলম ৮১ মোকামটোলার পাঁচতলার নির্মাণাধীন বাড়িটি দেখিয়ে বলেন, এটি আরিফুরের বাড়ি। বাড়িটির একতলা নির্মাণ শেষ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এলাকায় তাঁর মালিকানায় দুটি দোকান আছে।

২০১৭ সালের ৯ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরিফুর রহমানকে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, ‘কার্যপরিধি অনুযায়ী অফিসের সব বিল তৈরিসহ অডিট আপত্তির জবাব ও নিষ্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আপনি তা করেননি। এতে প্রমাণিত হয়, আপনি নিজ দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করেছেন, যা সরকারি চাকরিতে সরকারি বিধিমালা পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ অভিযোগের বিষয়ে আরিফুর রহমান দাবি করেন, ‘আমি হাসপাতালের টাকা আত্মসাৎ করিনি। আমার পেছনে শত্রু ছিল। তারাই আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছে।’

হাসপাতালের ক্যাশিয়ার আলমগীর হোসেন দুদকের করা তদন্তের বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘দুদক আমাকে ডাকেনি। হাসপাতালের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে টিকিট ক্লার্ক আজিজুল হককে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘আমি যোগ দেওয়ার আগের ঘটনা এটি। অভিযোগের বিষয়ে জানি আমি। ঘটনাটি দুদক তদন্ত করছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে আরিফুরসহ সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দুদক সূত্র বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরিফুর রহমানসহ তিন কর্মীর বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য পাওয়া গেছে।