তনু হত্যা: আজও শনাক্ত হয়নি খুনিরা, তদন্তে নেই অগ্রগতি

বহুল আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বুধবার। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়েও তনুর খুনিরা শনাক্ত হয়নি। ঘাতকদের কেউ ধরাও পড়েনি।

তনুর খুনিরা এখনো চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার, সহপাঠী ও জেলার বিশিষ্টজনেরা। তারা অবিলম্বে তনুর খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। এ দিকে, মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই এবং তদন্তে গাফিলতি আছে এমন অভিযোগ করেন তনুর পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলতে চান। তবে এ মামলার তদন্ত নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা, এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই তা বলা যাবে না। আমাদের কাজে কোনো স্থবিরতা নেই, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ডিএনএ পরীক্ষা এবং ম্যাচিং করার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। ডিএনএ ম্যাচিংয়ের কাজ চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, তিনটি বছর পার হয়ে গেলও ঘাতক শনাক্তে আশার আলো এখনো দেখছি না। দেখব কি না তাও জানি না। গত এক বছর ধরে সিআইডি কর্মকর্তাদের কোনো খবর নেই। মৃত্যুর আগে আমি আমার একমাত্র মেয়ের হত্যাকারীদের দেখে যেতে পারবো কি না জানি না। তবে এখন আমার একটাই ইচ্ছা- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এ বিষয়ে কিছু কথা বলে সান্ত্বনা খুঁজে পেতে চাই। আমার আবেগ ও কষ্টটা তার কাছে বলতে চাই। কারণ তিনিও একজন মা। একজন মা বোঝেন সন্তান হারানোর বেদনা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রতন কুমার সাহা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। তদন্তকারী সংস্থার গাফিলতি না থাকলে তদন্ত প্রক্রিয়া এত দীর্ঘায়িত হতো না। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম চৌধুরী নোমান বলেন, তিন বছরেও কোনো আসামি শনাক্ত করা যায়নি। হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, তদন্তকারী সংস্থা তিন বছরেও অপরাধীদের শনাক্তে সফলতা দেখাতে পারেনি। তাদের ব্যর্থতায় মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। দুই দফা ময়নাতদন্তে তনুর ‘মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ’ উল্লেখ করা হয়নি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট।

২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা জানায়। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কি না- এ নিয়েও সিআইডি কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে এদের নাম জানানো হয়নি।