তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা ১৪ দলের

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের হুমকির মধ্যে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দল।

আগামী অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন জোট।

নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালে ব্যর্থ হলেও সেই সময়ের মতোই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা রাজপথে থেকে সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেবেন।

চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে এই রাজপথে থাকা শুরু করে ক্ষমতাসীন জোটের-জানিয়েছেন জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশে নতুন ভবনে জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এই সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব জানান নাসিম।

ডিসেম্বরের শেষে জাতীয় নির্বাচনের ভোট হবে জানিয়ে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তবে দশম সংসদ নির্বাচনের মতোই আগামী নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াত জোটের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি এখনও।

তার ওপর ভোটের রাজনীতিতে অসফল গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের হঠাৎ সক্রিয় হওয়াসহ নানা তৎপরতায় ক্ষমতাসীন জোটে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় কি না, এটা জানার চেষ্টা করছে তারা।

নাসিম বলেন, ‘এই ধরনের মুখচেনা মহলকে আমরা জানি। এরা চক্রান্ত শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি এই ধরনের চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে, থাকবে। ১৪ দল সজাগ আছি।’

‘এই লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখ থেকে মাঠে নামব। পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করব। এই সমাবেশ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’

‘নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর আমরা যার যার মতো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ব।’

১৪ দল নেতা বলেন, ‘যখনই নির্বাচন আসে, ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নেওয়ার সময় আসে, তখনই একটি অশুভ মুখচেনা মহল তৎপরতা শুরু করে দেয়।’

‘২০১৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখনও এই অশুভ মহলটি জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে একটি অসাংবিধানিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। তখনও আমরা ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে সেই অশুভ শক্তি মোকাবেলা করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে কমিশনকে আমরা সহায়তা করেছিলাম।’

‘আজকে যখন নির্বাচন প্রায় ঘরের দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তখন আবার সেই মুখচেনা মহলটি মাঠে নেমে গেছে।’

নাসিম বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের আগে (২০০৭ সালে) কিছু লোক নেমেছিল। তাদের মুখে অনেক কথা আমরা শুনেছি, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথা আমরা শুনেছি। তাদের সেই অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যে তারা ওয়ান-ইলেভেন ঘটিয়েছিল।’

‘কীভাবে সেখানে একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন কাজ করেছিল সেটা আপনারা সবাই জানেন। সে কারণেই আমরা বলতে চাই, সংবিধান বিরোধী কোনো কাজ বাংলাদেশে হবে না। সংবিধান বিরোধী কোনো কাজ আমরা ১৪ দল মেনে নেব না।’

নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেটি আবার জানিয়ে নাসিম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আসলেই যেন অবান্তর, অসাংবিধানিক প্রশ্নগুলো তারা সামনে তুলে আনে। সারা দুনিয়ায় এখন নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে।’

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে নিশ্চয়তা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির যুগে নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। সেই ব্যাপারে দেশবাসী যেমন সজাগ, তেমনি আমাদের সংবাদ মাধ্যমও সজাগ।’

‘সংবিধানের বাইরেও নির্বাচন করা যেতে পারে’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে নাসিম বলেন, ‘খেলার কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুন আছে। সেই নিয়ম তো আর কথায় কথায় পরিবর্তন করা যাবে না। খেলায় জিততে হলে আমার যে কোনোভাবে নিয়ম পরিবর্তন করে খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে-এটা হতে পারে না। সুবিধা অনুযায়ী আপনাকে খেলার নিয়ম পরিবর্তন করতে পারবেন না।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেনকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, আইনজ্ঞ কীভাবে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ব্যবহার করে জুডিশিয়াল ক্যু করে পাকিস্তানের মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল? শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে, ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের দৃঢ়তার কারণে ওই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে, কীভাবে এই নির্বাচনকে প্রতিহত করা যায়।।’

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম সংলাপে বসারও বিরোধী ১৪ দল। নাসিম বলেন, ‘নির্বাচনকে ঠেকানোর জন্য বলা হচ্ছে আমাদের এই দাবি মানতে হবে। এই ধরনের অযৌক্তিক দাবি কেউ মানবে না। কোনো অর্থহীন সংলাপের পক্ষে ১৪ দল নয়।’

‘সংলাপের মানে হচ্ছে এই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া, দীর্ঘায়িত করার একটা চক্রান্ত। এই সংলাপের অর্থই হলো দেশে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যে পরিস্থিতির মাধ্যমে দেশে একটা অসাংবিধানিক সরকার যেন প্রতিষ্ঠা করা যায়।’

জাতীয় পার্টি জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান প্রমুখ।