তলিয়ে গেছে রাস্তা: চট্টগ্রামে যাতায়াতে নৌকা কেনার হিড়িক

চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর ‘কে’ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল হাসনাত। সোমবার বিকালে আগ্রাবাদ আখতারুজ্জামান সেন্টারের সামনে থেকে নৌকায় চড়ে যাচ্ছিলেন বাড়ির দিকে। সঙ্গে চড়ে বসলেন আরও দু‘জন। কিন্তু মালামাল থাকায় অপরাগতা প্রকাশ করলেন নুরুল হাসনাত। তবুও অনুরোধ রাখতেই হলো তাকে।

এ সময় কথা হয় নুরুল হাসনাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের সঙ্গে তাদের বসবাস। রাতদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনোরকম বৃষ্টি ছাড়াই ভোর থেকে ৭-৮ ঘণ্টা আবার বিকাল থেকে ৭-৮ ঘণ্টা পানিতে ডুবে থাকতে হয় তাদের। গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। এই সময় ঘরে বাইরে চলাচলের সড়কে কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর থেকে গলা সমান পানি ডিঙিয়ে চলাচল করতে হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে বর্ষা শুরুর আগে থেকেই অতিবৃষ্টির ফলে এ অবস্থা আরও দুরুহ হয়ে উঠে। ফলে নিরুপায় হয়ে গাড়ি বের না করে নৌকায় চলাচল করছি।

তিনি বলেন, শুধু আমি নই; সাম্প্রতিক সময়ে হালিশহর ‘এ’ থেকে ‘কে’ ব্লকের লাখো বাসিন্দা নগরীর পানির সঙ্গে বসবাস করছে। এসব মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, লাটে উঠেছে। খাবার জোগার করার জন্যও গাড়ি বের করতে পারছেন না। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে গাড়ির বদলে এখন অনেকে ডিঙ্গি নৌকা কিনতে শুরু করেছেন।

শুধু হালিশহর এলাকার বাসিন্দারা নয়; আগ্রাবাদে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারাও অফিস ও বাজারে যাওয়া আসার জন্য ডিঙি নৌকা কিনেছেন। যাদের দেখে আগ্রাবাদ ও আশপাশের জলমগ্ন এলাকার মানুষও এখন নৌকা কেনায় ঝুঁকে পড়েছে।

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ কার্যালয় সূত্র জানায়, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার ১ নম্বর সড়কের ছয়তলা ভবনে ১৭টি এবং একই সড়কের হাতেখড়ি স্কুলের বিপরীতে ১৬ তলা ভবনে ৫৭টি অঞ্চলভিত্তিক কর কার্যালয় রয়েছে। দুই ভবনে প্রায় সাড়ে ৪০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ এর কর কমিশনার আহমদ উল্লাহ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অফিসে উপস্থিত থাকতে হয়। আমাদের জন্য সরকারি গাড়িও আছে। কিন্তু বৃষ্টি ও জোয়ারে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে অফিসে যাতায়াতের সড়কটি দেড় থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ জন্য ১১ জুলাই ২৬ হাজার টাকা দিয়ে আমরা একটি নৌকা কিনেছি।

আহমদ উল্লাহ আরও বলেন, নৌকাটিতে এক সঙ্গে তিন-চারজন যাতায়াত করতে পারে। নৌকা কেনার কারণে আমাদের যাতায়াতে সমস্যা কিছুটা কেটে গেছে। চট্টগ্রাম কর অঞ্চলের একজন দারোয়ান দাঁড় বেয়ে নৌকাটি চালিয়ে নিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, নগরীর আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাড়ির নিচতলায় এখন তিন থেকে পৌনে পাঁচ ফুট পানি। সেখানকার বাসিন্দাদের এখন প্রধান বাহন নৌকা ও রিকশা। তিন-চারটি নৌকা দিয়ে এলাকার মানুষ কর্মস্থলে যাওয়া আসা করছেন।

আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২২ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির বাসিন্দা সৈয়দ মো. ইয়াসিন হীরা বলেন, সোমবার দুপুরে আমার বাড়ির নিচতলা প্রায় পৌনে পাঁচ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি গ্যারেজের ভেতরে পানিতে পুরো ডুবে আছে। চিকিৎসক স্ত্রী হাসপাতালে যেতে পারেনি।

সৈয়দ মো. ইয়াসিন আরও বলেন, যাতায়াত সমস্যা দূর করতে সীতাকুন্ড থেকে একটি নৌকা কেনার কথাবার্তা চলছে। তবে আমাদের সিডিএ এলাকার বাসিন্দারা চারটি নৌকা ইতোমধ্যে কিনেছেন।

একইভাবে নগরীর বাকলিয়া ও চাক্তাই এলাকার বাসিন্দারাও চলাচলের জন্য গাড়ি ছেড়ে এখন নৌকা কেনা শুরু করেছেন। এসব এলাকার বিভিন্ন সড়কে গাড়ির বদলে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে। নগরীর মুরাদপুর ও ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায়ও সড়কের ওপর নৌকা চলতে দেখা গেছে।

নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, টানা বৃষ্টি ও অমাবস্যার কারণে জোয়ারের পানি বেড়ে গেছে। এতে আমাদের এলাকায় পানি থইথই করছে। নিচতলার বাসাগুলো ডুবে গেছে। বাসা থেকে বাদামতলী মোড় পর্যন্ত আসা যাওয়া করতে রিকশা ভাড়া গুনতে হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তাছাড়া বছরের বেশিরভাগ সময় এই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে নগরী। ফলে গাড়ির বদলে এখন নৌকা কিনে আনা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত চার দিনের টানা বৃষ্টি ও বঙ্গোপসাগরের প্রবল জোয়ারে নগরীর চান্দগাঁও, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ, সদরঘাট, বাকলিয়া, হালিশহর, ষোলশহর, খুলশী, বায়েজীদ, অক্সিজেন, চাক্তাই, মোহরা, মদুনাঘাট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। এসব এলাকার মানুষ চলাচলের জন্য এখন ডিঙ্গি নৌকা কেনা শুরু করেছেন।