তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলে ৬৬৯ নেতার কমিটি

ঢাকা কলেজ শাখার মত রাজধানীর তিতুমীর কলেজ শাখাতেও ঢাউস কমিটি দিল বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ৬৬৯ জন। ১৪ বছর পর কলেজ শাখা ছাত্রদলের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কলেজ কমিটির পাশাপাশি হল কমিটিও ঘোষণা হয়েছে একই সঙ্গে।

সোমবার গণমাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে কমিটি সংক্রান্ত ই মেইল পাঠানো হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে তাসনিম আহসান সবুজকে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আমিনুল হক হিমেলকে।

পদ পেয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। তবে কেউ কেউ এতবড় কমিটিতে পদ পেয়ে নিজে থেকে বিব্রত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো তালিকায় ৫৬৬ সদস্যের নাম পাওয়া গেলেও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটওয়ারি জানিয়েছেন, ৬৬৯ সদস্যের কমিটি দেয়া হয়েছে। ভুলক্রমে হয়তো তালিকার বাকি নামের মেইল যায়নি। প্রয়োজনে আবারো পাঠানো হবে।

নতুন কমিটির তালিকায় ঘেঁটে দেখা গেছে নতুন কমিটিতে সহসভাপতি করা হয়েছে ৯৫ জনকে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ১৪৩ জনকে এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ১৫২ জনকে।

কমিটিতে একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে সহসাংগঠনিক ৯৬ জন।

প্রায় সবগুলো সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে কোথাও তিনজন, বেশিরভাগ পদে চারজন সহসাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। সম্পাদক ও সহসম্পাদক করা হয়েছে ১২০ জনকে।

তালিকায় দেখা গেছে, সমাজসেবা সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। যোগাযোগ সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক চারজন। পাঠাগার সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। অর্থ সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক চারজন। আপ্যায়ন সম্পাদক একজন, সসম্পাদক চারজন। ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক একজন, সসম্পাদক একজন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। ধর্ম সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পাদক একজনের সঙ্গে সহসম্পাদক করা হয়েছে চারজনকে।

এছাড়া প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। গণশিক্ষা সম্পাদক একজন, সসম্পাদক তিনজন। আন্তর্জাতিক সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক চারজন। গণসংযোগ সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক চারজন। স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। ছাত্র কমনরুম সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক চারজন। মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক চারজন।

বৃত্তি ও ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক চারজন। ক্রীড়া সম্পাদক একজন, সহক্রীড়া তিনজন। পরিকল্পনা সম্পাদক একজন, সহপরিকল্পনা তিনজন। আইন সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক একজন, সহসম্পাদক তিনজন।

এছাড়াও সদস্য করা হয়েছে ৫৩ জনকে।

তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন ঢাউস কমিটি দেয়ার খবর নতুন নয়। গতবছর সিলেট জেলা ও মহানগরে কমিটি দেয়া হয়েছিল ৭৬২ সদস্যের। এরপরও সেখানে কোন্দল থামেনি ।

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। আংশিক এই কমিটি যখন পূর্ণাঙ্গ করা হয় তখন মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৩৪ সদস্যে।

বর্তমান কমিটি এর আগে ঢাকা কলেজে ছয়শ সদস্যের কমিটি দিয়েছিল। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনা হয়েছিল।

যদিও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা কলেজ ইউনিটের নেতাদের দাবি ছিল, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ার কারণে জট সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন এমন নেতাদের সবাইকে অন্তত একটি দলীয় পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে কারণে কমিটি কিছুটা বড় পরিসরে করতে হয়েছে।

তিতুমীর কলেজের নতুন পদ পাওয়া ছাত্রদলের একজন সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কমিটি হওয়ার পর সাধারণত আনন্দ করে। কিন্তু আমরা বিব্রত। কারণ আমার পদেই ৯৫ জন নেতা। পরিচয় দিতে গেলে তো শুধু সহসভাপতি বলার উপায় রইলো না, এখন বলতে হবে এত নম্বর সহসভাপতি!’

এদিকে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের ঢাউস কমিটির সমালোচনা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একজন শীর্ষ নেতা ফেসবুকে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেছেন, বড় আকারের কমিটি কমিটিকে শক্তিশালী করে নাম বরং দুর্বল করে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী কমিটি বড় আকারে হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ’১৪ বছর কমিটি হয়নি তিতুমীর কলেজে। এছাড়া এটা অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। অনেক ছাত্রছাত্রী। দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করলেও কেউ এতদিন কোনো পদ পায়নি। যে কারণে কমিটি একটু বড় করতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের ব্যক্তিগত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া গেছে। আর সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি।