তিনি একজন দালাল, মিসাইল আর গণহত্যার অস্ত্র বিক্রির দালাল!

অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি সেখানে উত্তর কোরিয়ার ‘ইকোনমিক এজেন্ট’ হিসেবে অভিনয় করে যাচ্ছিলেন।

বলছিলেন, পিয়ংইয়ং সরকারের জন্যে অর্থ উত্তোলনই নাকি তার কাজ।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ জানায়, তার নাম চ্যান হান চোই। আসলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে। থাকেন সিডনিতে।

পুলিশ জানায়, অভিযোগ রয়েছে, এই ব্যক্তি একজন দালাল। যেনতেন দালাল নন, তিনি বিক্রি করেন মিসাইল আর মিসাইলের যন্ত্রাংশ। এ বিষয়ে দক্ষ তিনি। ব্যাপক গণহত্যার জন্যে যেসব অস্ত্র ও বোমা ব্যবহৃত হয়, তা বিক্রির দালানি করেন তিনি।

মিসাইল বা অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনাও ছিল তার। শুধু তাই নয়, উত্তর কোরিয়া থেকে ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ায় কয়লা সরবরাহের কাজও করছিলেন তিনি। তবে পুলিশ নিশ্চিত নয় যে, তার এই পরিকল্পনার বিষয়টি আদৌ ওই দুই দেশের সরকার জানে কি না।

এ ঘটনায় জাতিসংঘের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সুসম্পর্কে ফাটল ধরবে। সম্প্রতি ইউএন অস্ট্রেলিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় রপ্তিকৃত সামুদ্রিক খাবার থেকে শুরু করে বিদেশি শ্রমিকের দিকে নজর দিয়েছে। বর্তমানে আটককৃত চ্যানের বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ তোলা হয়েছে।

পুলিশের ভাষ্যমতে, এই ব্যক্তি অর্থ সংগ্রহের জন্যে গণহত্যা চালানোর অস্ত্র, ব্যালেস্টিক মিসাইল প্রযুক্তি ইত্যাদি বিক্রি করতো এবং স্পেশালিস্টদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করতো। এ আলোচনার মাধ্যমে ব্যালেস্টিক মিসাইল উৎপাদনের স্থান নির্বাচন, বাইরে কোথাও উত্তর কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হতো। এসব বিক্রির ক্রেতাও খুঁজতেন তিনি।

ফেডারেল পুলিশের সহকারী কমিশনার নেইল গোহান বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কী কী আছে বা ঘটছে, সম্ভবত তার কিছুই আমরা জানি না।

কমনওয়েলথের উইপন্স অব মাস ডেসট্রাকশন অ্যাক্টের অধীনে অস্ট্রেলিয়ার এই প্রথমবারের মতো কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো।

গত শনিবার পর্যন্ত আদালতে চোই জামিনের জন্যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া জামিনের বিষয়টি রীতি অনুসারে নাকচ করে দিয়েছে অ্যাক্টিং ম্যাজিস্ট্রেট কার্ল মিনোভানোভিচ।

‘অন্য এক’ আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ‘অন্য এক’ বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ চোইকে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

অবশ্য গোহান আশ্বস্ত করে বলেছেন, এই ব্যক্তি ব্যবসায়ী কার্যক্রম অফশোর-এ পরিচালিত হয়। তবে তিনি অস্ট্রেলিয়া এবং এর জনগণের জন্যে হুমকি নন। কোনো ধরনের অস্ত্র বা মিসাইল ও মিসাইলের যন্ত্রাংশ অস্ট্রেলিয়া আনার কোনো ঘটনা তিনি ঘটাননি।

সেভেন নেটওযার্ক অস্ট্রেলিয়াকে গোহান আরো জানান, এই ব্যক্তি উত্তর কোরিয়ার এক বিশ্বস্ত এজেন্ট। তিনি এসব কাজের মাধ্যমে কোনো মহৎ দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব পালন করছেন বলে মনে করেন। আসলে উত্তর কোরিয়ার সরকারের জন্যে অর্থ সংগ্রহের জন্যে এই ব্যক্তি তার অধীনে যা আছে তার সবই বেচে দিতে প্রস্তুত।

অবশ্য চোইয়ের দুটো ব্যবসায়ীক পদক্ষেপ ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সেভেন নেটওয়ার্ক। তবে আরো এ ধরনের ব্যবসায়ীক লেনদেন অতীতে হয়ে থাকতেই পারে। এসব ব্যবসায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিময় হয়েছে বলেই বিশ্বাস পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের।

সূত্র : সিএনএন