তিন বছরের ‘উন্নয়নের ফিরিস্তি’ তুলে ধরলেন মেয়র খোকন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়িত্বভার গ্রহণের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে সার্বিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন।

বুধবার নগরভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের দায়িত্বভার গ্রহণকালে কর্পোরেশনের সমুদয় রাস্তাঘাট ভেঙে-চুরে একাকার হয়ে গিয়েছিল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছিল, মশা মারার ওষুধ একটুও মজুত ছিল না, সড়ক বাতি জ্বলত না। বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে নগর ভবনের বিদ্যুৎলাইন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ রকম একটি অবস্থায় কর্পোরেশন পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নগরবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পেয়ে আমরা তিন বছরে নগরীর ভাঙাচোরা বেহাল রাস্তা, ফুটপাত, নর্দমা সংস্কার ও মেরামত, এলইডি বাতি সংযোজন, পাবলিক টয়লেট, পার্ক, খেলার মাঠ, কবরস্থান, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন (এসটিএস) নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, রাজস্ব উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ, সর্বস্তরের নাগরিকদের সচেতন, সম্পৃক্ত ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ডিএসসিসির সার্বিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা এনেছি। নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছি। ঢাকার নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে নানা ধরনের পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। আরও দৃশ্যমান হবে এমন মন্তব্য করে তিনি উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এলইডি বাতি স্থাপন : এক সময় এ নগরীতে সড়ক বাতি জ্বলত না। পুরো নগরী অন্ধকারে ডুবে থাকত। ফলে ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতো। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সমগ্র ডিএসসিসি এলাকার রাস্তা, অলি-গলি সর্বত্র এলইডি বাতি লাগিয়েছি। এ পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৯৭৯টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে। নবসংযুক্ত ৮টি ইউনিয়নেও এলইডি বাতি স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

রাস্তা, ফুটপাথ, নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন : বাসোপযোগী, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর নগরীরূপে গড়ে তুলতে গত তিন বছরে সরকারের অর্থ (জিওবি) ও নিজস্ব অর্থায়নে নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ৪৭৩.২৪ কি.মি. রাস্তা উন্নয়ন এবং ১১২.৪৮ কি. মি. ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়ন, ৪৬৯.৯৬ কি.মি. নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। আরও ২৫৯.৬১ কি.মি. সড়ক, ২৬১.৮৫ কি.মি. ড্রেন এবং ৫১.৫১ কি.মি. ফুটপাথ নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

যানজট নিরসন : মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৩০টি বাস-বে/বাস স্টপেজ কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩টির কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ৪টি ইন্টারসেকশন উন্নয়নসহ ৭১টি স্বচ্ছ পুলিশ বক্স নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮টি পুলিশ বক্সের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং ৫টি উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের ৮টি এলাকায় ৫৬০টি স্থানে অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা হয়েছে।

পাবলিক টয়লেট নির্মাণ : নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত অত্যাধুনিক ১৯টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আরও ৪৭টির মধ্যে ১৫টির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ হওয়ার পথে।

শান্তিনগর এলাকার জলাবদ্ধতা : একসময় শান্তিনগর এলাকায় হাটু সমান জলাবদ্ধতা হতো। এলাকাবাসী অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতেন। এ অবস্থা নিরসনে আমরা শান্তিনগরে ড্রেনেজ নির্মাণে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করি। এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর এখন শান্তিনগর এলাকায় কোনো জলাবদ্ধতা হচ্ছে না। শহরের অন্যান্য এলাকাতেও যেন পানি জমে না থাকে, সেজন্য ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এ বছর প্রায় ৪০০ কি. মি. নর্দমা পুরষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া নাজিমউদ্দিন রোডে জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে গৃহীত প্রকল্পের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। নগরীর অন্যান্য এলাকার বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণকল্পে ইতোমধ্যে ২৬১.৮৫ কি.মি. নর্দমা, ২৫৯.৬১ কি.মি. সড়ক, ৫১.৫১ কি.মি. ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১৩৫ কি. মি. রাস্তা, ২৭ কি. মি. ফুটপাত নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

নব সংযুক্ত ৮ ইউনিয়নের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড : ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া-এ ৪ ইউনিয়নের ১৫২.৩৪ কি.মি. রাস্তা, ৬.১০ কি.মি. ফুটপাথ, ১৫৮.৫০ কি.মি. নর্দমা, ১৪৩.৪৭ কি.মি. রাস্তায় এলইডি লাইট, ৭ হাজার ৬৩টি বৃক্ষরোপণসহ নানা অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি।

এছাড়া মান্ডা, ডেমরা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও-এ ৪টি ইউনিয়নের জন্য ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫.৭২ কি.মি. রাস্তা, ৪৮ কি.মি. নর্দমা, ৭.৯৫ কি.মি. ফুটপাথ, ১৭টি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে-যা টেন্ডার আহ্বানের অপেক্ষাধীন রয়েছে।

খেলার মাঠ ও পার্ক উন্নয়ন : আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য এবং বিনোদনের জন্য ‘জলসবুজে ঢাকা’ শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে একটি গোস্যা পার্কসহ আন্তর্জাতিক মানের ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন করা শুরু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এসব মাঠ ও পার্কের কয়েকটি চলতি বছরের মধ্যে এবং অবশিষ্টগুলো আগামী বছরের জুন নাগাদ সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি।

ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ : নিরাপদে সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে কেস প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৯টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পের আওতায় নতুন ৭টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান ১৬টি ফুটওভার ব্রিজের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

মডেল রোড : মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭নং (রাপা প্লাজা) হতে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত সড়কটি আদর্শ সড়কে রুপান্তরকরণ কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ঢাকার সবুজায়ন : ঢাকা মহানগরীকে সৌন্দর্যময়ী সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীদের নিজ নিজ বসত বাড়ির ছাদে বা আঙিনায় বাগান করার জন্য শতকরা ১০ ভাগ ট্যাক্স রিবেট প্রদান করা হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজগুলোকে সবুজ বৃক্ষশোভিত করে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। এছাড়া মতিঝিলসহ বিভিন্ন সড়কের মিডিয়ানে বিউটিফিকেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আধুনিক যান ও যন্ত্রপাতি সংযোজন : প্রকৌশল বিভাগের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়ন কাজে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক কোল্ড মিলিং মেশিন, জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। কোল্ড মিলিং মেশিন দিয়ে পুরনো ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে মাত্র ৭ ঘণ্টায় ১ কি.মি. সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব। এতে ব্যয়ও ৪০ ভাগ সাশ্রয়ী হয়। জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন নর্দমাতে জমে থাকা শক্ত ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে।

কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ : ৪৫নং ওয়ার্ডে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ৬ তলাবিশিষ্ট মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সেন্টার নির্মাণসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ৬টি কমিউনিটি সেন্টারের আধুনিকায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আজিমপুর কবরস্থানে ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ’ নামে আধুনিক মসজিদ ও অফিস নির্মাণ কাজ চলমান। এছাড়া কর্পোরেশনের আওতাধীন ২১টি ব্যায়ামাগার ও ১২টি সঙ্গীত শিক্ষা কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয়ের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নগরবাসীর জটিল রোগের চিকিৎসা, মেয়ের বিবাহ, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্যয় নির্বাহ, মসজিদ-মন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান, ক্রীড়া সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি, পথবাসী মানুষের আর্থ-সামাজিক কল্যাণে মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিল খাতসহ ১১টি উপখাত হতে প্রায় ৬ (ছয়) কোটি টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য : মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৫০০ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত ফ্ল্যাট-বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, তাদের জন্য আজিমপুর ও জুরাইন কবরস্থানে সংরক্ষণ, তাদের স্বজনদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার অর্ধেক ভাড়ায় ব্যবহারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

অবৈধ বিলবোড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণ (এক সময় অবৈধ ও দৃষ্টিকটু বিলবোর্ড-ব্যানার-ফেস্টুনে ঢাকা শহর ঢেকে ছিল; আকাশ, প্রকৃতি ও পার্ক কোনটাই দেখা যেত না)। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করেছি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২২০০টি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে।

ডিজিটালাইজড এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন : নগরীর সৌন্দর্য বজায় রেখে ব্যবসায়ীদের পণ্যের প্রচারের সুবিধার্থে পান্থকুঞ্জ পার্ক, গাউছিয়া মোড়, রাসেল স্কয়ার, তাঁতিবাজার মোড় ইত্যাদি এলাকায় ৯টি ডিজিটালাইজড এলইডি বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৯৫০টি বক্স এলইডি বোর্ড বসানো হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতকল্পে ডিজিটাল হাজিরা, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম, টেন্ডারিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় শতভাগ ই-টেন্ডারিং চালু, ইন্সট্যান্ট মনিটরিং করার জন্য হোয়াটস অ্যাপ চালু এবং সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম সরেজমিন দেখার জন্য ডিএসসিসি লাইভ মনিটরিং চালু করা হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নগর ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

খাল উদ্ধার : মান্ডা খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসন, ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে অন্যান্য খাল উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ডিএসসিসির অবৈধ দখলে থাকা প্রায় ১২০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

মশক নিধন কার্যক্রম : মশকের বংশ বিস্তার রোধকল্পে ফগিং এবং লার্ভিসাইডিং-এর নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ, ডেঙ্গু মশার উপদ্রুব থেকে নগরবাসীদের রক্ষাকল্পে বাসাবাড়ি, গৃহ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ফ্রিজ, এসি, ফুলের টবে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন, গৃহ আঙিনা ও এর আশপাশে পরিত্যক্ত ডাবের খোসা, ক্যান, টায়ার, টিউব ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি অপসারণ, ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক টিভিসি সম্প্রচার, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ইত্যাদি করা হয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি, কীটতত্ত্ববিদ, চিকিৎসক, ছাত্র, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

ঔষধ ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা : ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য কল সেন্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে ঔষধসহ স্বাস্থ্য সেবা প্রদান এবং ডেঙ্গু পরবর্তী শারীরিক অসহ্য যন্ত্রণা নিরসনে বাড়িতে ডাক্তার পাঠিয়ে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান ও প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যা কর্পোরেশনের ইতিহাসে অনন্য ও ব্যতিক্রমধর্মী। মেয়র হানিফ স্বাস্থ্য সেবা পক্ষে শীতকালীন সর্দি, কাশি, জ্বরের সেবা প্রদানসহ কল সেন্টারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ২ লাখ১ হাজার ৪৪৪টি কলের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের কল সংখ্যা ৭২ হাজার ২১২টি এবং সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ১ জন। চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তদের বিনামূল্যে বাড়িতে গিয়ে ডাক্তারি সেবা, ঔষধ প্রদান, ফিজিওথেরাপি প্রদান ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয়েছে।

স্বচ্ছ ঢাকা কর্মসূচি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী স্বচ্ছ ঢাকা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, স্কাউট, গার্লস গাইড রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি নানা শ্রেণি-প্রেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। জিরো পয়েন্টে আয়োজিত এ বিশাল গণসমাবেশে পনের হাজারের অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে।

ভেজাল খাদ্য বিরোধী অভিযান : খাদ্যে ভেজাল বিরোধী কার্যক্রমের আওতায় অত্র সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৩টি সরকারি ও ১৯টি বেসরকারি কাঁচাবাজারকে ফরমালিনমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা ছাড়াও জব্ধকৃত মালামাল ধ্বংস করা হচ্ছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নসহ নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নগরীকে পরিচ্ছন্ন করার ধারণা বদলে দিতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এটি এখনও চলমান আছে। নানা ধরনের উদ্যোগের ফলে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ঢাকা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন। তবে প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি। কাঙ্খিত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে সকলের সার্বিক মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে এবং সচেতন হতে হবে।

এসটিএস : ইতোমধ্যে ১০টি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন (এসটিএস) নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছে। আরও ১৩ টির নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত। ডিএসসিসি ও প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০ টন ক্ষতিকর বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবেশ সম্মতভাবে পরিশোধন করা হচ্ছে। তাদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওয়েস্টবিন স্থাপন, আবর্জনার কন্টেইনারসমূহকে দৃষ্টির আড়ালে রাখার লক্ষ্যে বর্জ্যবাহী কন্টেইনারগুলোকে ফেন্সিং করে দেয়া হয়েছে। এসটিএস নির্মাণ সমাপ্ত হলে কন্টেইনারগুলোকে এর মধ্যে স্থাপন করা হবে। তখন সড়কে কোনো কন্টেইনার থাকবে না।

ওয়েস্ট বিন স্থাপন : নগরবাসীর জন্য চিপসের খোসা, পানির বোতল, ক্যান, টিস্যু পেপার ইত্যাদি হালকা আর্বজনা যত্রতত্র না ফেলে এসব বিনে ফেলে নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে সংস্থার ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ১০০টি করে ৫ হাজার ৭০০টি ওয়েস্ট বিন স্থাপন করা হয়েছিল। নতুন উদ্যোগ হিসেবে এটি প্রশংসিতও হয়েছিল। কিন্তু কোনো কোনো নগরবাসী এটি ভেঙে নিয়ে ফুলের টব, চাল, ডাল রাখার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। মাদকাসক্তরা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন, দুর্ঘটনাতেও কিছু নষ্ট হয়েছে। আমরা এগুলো পুনরায় মেরামত বা রিপ্লেস করার চেষ্টা করছি।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটের ও কোরবানির বর্জ্য অপসারণ :ডিএসসিসি এলাকায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির হাট বসানোসহ লক্ষাধিক পশু কোরবানি হয়। উক্ত হাটের বর্জ্য এবং কোরবানিকৃত পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে গত ঈদুল আজহায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২৪ ঘন্টার মধ্য নগরীর কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়।

মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ : ল্যান্ডফিলে বর্জ্য অপসারণ নির্বিঘে রাখতে এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর তথা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৭২৫ কোটি টাকার “মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন” প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে-যা একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৮১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিবাস নির্মাণ : পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ধলপুর, লালবাগ ও গণকটুলীতে ছয় তলাবিশিষ্ট ৬টি ক্লিনার কলোনী নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছে। গণকটুলিতে আরও ৬টি ও মিরনজল্লা ক্লিনার কলোনীতে ৩টি ছয়তলা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া ধলপুর ক্লিনার কলোনীতে ১টি একতলা এবং ১টি দুইতলা ভবনকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে ছয় তলা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কর্তৃক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৩টি দশ তলাবিশিষ্ট ভবনে সর্বমোট ১ হাজার ২১৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি অনুষ্ঠান : এ পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২৫টি জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি শীর্ষক এক ব্যতিক্রমধর্মী জবাবদিহিমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস, রাজউক, ডিএমপিসহ ২৮টি সেবা সংস্থার প্রতিনিধিসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। তারা এলাকাবাসীর বিভিন্ন সমস্যার কথা সরাসরি শোনেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে তা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবাবদিহিতার এটি একটি জনপ্রিয় উদ্যোগ।

বাজার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন : চানখারপুল, ঢাকেশ্বরী মার্কেটের উন্নয়ন কাজ চলছে এবং ৪-৫টি মার্কেটের উন্নয়নে টেন্ডার আহবানের প্রক্রিয়া চলছে। অটোমেশন পদ্ধতিতে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সম্মানিত করদাতাগণ যাতে ঘরে বসেই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারেন, সেজন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য ও আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম : নাগরিকদের সাশ্রয়ী মূল্যে বিয়ে-সাদী, আকিকাসহ সামাজিক নানা অনুষ্ঠান সম্পন্নের লক্ষ্যে ৩টি অত্যাধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আজিমপুর কবরস্থান মসজিদ এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির আধুনিকায়ন করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মিরনজল্লা সুইপার কলোনীতে ১টি মন্দির, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের আধুনিকায়নসহ শবদেহের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের জন্য ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থা : প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাংক সাহায্যপুষ্ট আরবান রিজিলাইন্স প্রজেক্টের আওতায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধিক্ষেত্রে ৩টি স্থানে ওয়ার হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জ্ঞান বৃদ্ধি ও প্রস্তুতি শক্তিশালী করার জন্য সেচ্ছাসেবক গঠন এবং কমিউনিটি ও স্কুল পর্যায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে ডিইইপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নগরাঞ্চলে দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪টি ওয়ার্ডে পিএসটিসি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের নিমিত্ত মাস্টার প্ল্যান করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

ঢাকা আরবান আপগ্রেডিং প্রজেক্ট : ‘ঢাকা আরবান আপগ্রেডিং প্রজেক্ট’ শিরোনামে ১টি নতুন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে; যা অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনসহ পুরাতন ঢাকা বিশেষ করে কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, সূত্রাপুর, নয়াবাজারসহ গুলিস্তান, খিলগাঁও, মুগদা, বাসাবো সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সাঈদ খোকন বলেন, ‘নগরবাসীর নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এসব উদ্যোগ সফল করতে কর্পোরেশনের কার্যক্রমে আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। আপনারা আমাদের সাথে থাকুন, পাশে থাকুন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসির কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন।