তিমির রক্তে লাল সাগরের পানি

নরওয়ে আর আইসল্যান্ডের মধ্যবর্তী আটলান্টিক সাগরের দক্ষিণে ভয়াবহ শীতের এক দ্বীপ। সমুদ্রবেষ্টিত সেই দ্বীপটির নাম ‘ফারো’। ১৮টি ছোটো ছোটো দ্বীপ নিয়ে গঠিত স্বায়ত্তশাসিত ফারো দ্বীপপুঞ্জ ডেনমার্কের আওতাভুক্ত। সম্প্রতি সেখানে তিমি শিকারীদের হাতে মারা পড়েছে কয়েক ডজন তিমি মাছ, ছুরির আঘাতে তিমির শরীর থেকে ছিটকে বেরোনো রক্তে লাল হয়ে গেছে সাগরের পানি।

বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন তীব্র শীত মৌসুমে খাবার মজুদ করার উদ্দেশ্যে দলগতভাবে ওই তিমিগুলোকে শিকার করেছে ফারো দ্বীপের বাসিন্দারা। এমনকি দ্বীপের বাচ্চারা পর্যন্ত অংশ নিয়েছে দলগত ওই তিমি শিকারে। দ্বীপের বাইরের যে কোনো বাসিন্দা বা পর্যটকের কাছে ভয়ঙ্কর মনে হলেও ফারোবাসীদের কাছে সেটি উৎসবের মতো।

জানা যায়, ওই কয়েক ডজন পাইলট প্রজাতির তিমির মাংস আর চর্বিই হবে আসন্ন শীতে ৫০ হাজার ফারোবাসীর খাবারের মূল উৎস।

সম্প্রতি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অ্যালেস্টার ওয়ার্ড (২২) সান্তামাউগে উপসাগরে দলগতভাবে ‘হোয়েল ড্রাইভিং’ নামে ওই তিমি শিকারের বেশ কিছু আলোকচিত্র প্রকাশ করেছেন। তাঁর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ফারো দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা বাৎসরিক এই তিমি শিকার উৎসব পালন করে আসছে।

উপসাগরে এত তিমি দেখে প্রথমে আশ্চর্য হয়ে যান আলোকচিত্রী ওয়ার্ড।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘ট্রাইঅ্যাঙ্গেল’কে ওয়ার্ড বলেন, ‘শিকারীরা শুরুতে দাঁড় দিয়ে গুতিয়ে গুতিয়ে তিমিগুলোকে দ্বীপঘেঁষা বেলাভূমিতে নিয়ে আসে, যখনই তারা কাছাকাছি চলে আসে দ্বীপবাসী দৌড়ে নেমে যায়, আর তিমিগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে।’

‘এমনকি বাচ্চারাও যুক্ত হয় ওই কাজে; দড়ি ধরে টানে, তিমির মরদেহগুলোর ওপরে উঠে লাফালাফি করে,’ বলেন ওয়ার্ড।

ফারোর চারপাশে পাইলট প্রজাতির তিমি পর্যাপ্ত সংখ্যক আছে বলে জানান দ্বীপের বাসিন্দারা। সেগুলোর সংখ্যা প্রায় এক লাখ হবে, আর তারা বছরে প্রায় ৮০০ তিমি শিকার করে।

শিকার দেখার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে ওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা নির্বাক আর বিষণ্ণ হয়ে বসে ছিলাম শুধু, এ ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।’

ফারোবাসী তিমি শিকারের ব্যাপারটাকে সবার জন্য অংশ্রগ্রহণমূলক বলে মনে করে। খাবারের প্রয়োজনে ওই তিমি শিকার জাতীয় আইনে আনুমোদিত বলে জানা যায়। আইনে শুধু লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে, শিকারের সময় তিমিদের যাতে সবচেয়ে কম কষ্ট দেওয়া হয়।

যদিও তিমিগুলোকে হত্যা করার পদ্ধতিটি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়ার্ড বলেন, ‘শিকারের সময় তিমিগুলোর আহাজারি ছিল বিভীষিকাময়, দড়িতে আঙটা লাগিয়ে তাদের শরীর বিদ্ধ করে তীরের দিকে নিয়ে আসা হয়, আর তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মারা হয়।’

‘স্বাভাবিক মানুষের মতো তিমিগুলো মরার সুযোগ পায় না,’ বলে আক্ষেপ করেন অ্যালেস্টার ওয়ার্ড।