তুরস্কে দেড় বছরে ২২ হাজার শিশু অন্তঃসত্ত্বা

তুরস্কে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে শিশু গর্ভধারণ। গত দেড় বছরে ২২ হাজার অন্তঃসত্ত্বা শিশু দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্সি ডিরেক্টরেট অব কমিউনিকেশন বলছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দেশটির হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্তঃসত্ত্বা শিশুর সংখ্যা ২১ হাজার ৯৫৭। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশটির প্রধান বিরোধীদল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির আইনপ্রণেতা ও চিকিৎসক আলী সেকের ডিরেক্টরেটর বলেন, ‘এই তথ্যে এটাই প্রমাণিত হয়, প্রতিদিন তুরস্কে ৪০ জনেরও বেশি শিশুকে গর্ভধারণে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা নিজেরাই শিশু এবং তাদের এখন স্কুলে যাওয়ার বয়স।’

তুরস্কে শিশু গর্ভধারণের সঠিক অবস্থা জানতে এটিই তার প্রথম প্রচেষ্টা নয়। এ বছরের শুরুতে পার্লামেন্টেও বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন।দু’টি হাসপাতালে নিবন্ধন ছাড়াই অন্তঃসত্ত্বা শিশুদের ভর্তি করার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে ১১৫ অন্তঃসত্ত্বা শিশুর মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ছিল ১৫ বছরের কম।

আসল পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ
আঙ্কারা বার অ্যাসোসিয়েশনের সেন্টার ফর চিলড্রেনস রাইটস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এমরাহ সাহিন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই ২১ হাজার ৯৫৭ ঘটনা কি পুলিশকে জানানো হয়েছে?’ তুরস্কের পেনাল কোডের বরাত দিয়ে সাহিন জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক গর্ভধারণের তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বাধ্য।

তিনি আরও বলেন, ‘এই সংখ্যা কেবল নিবন্ধিতদের। অনিবন্ধিত গর্ভধারণের কোনো হিসেবই নেই। আসল সংখ্যা ৪০ থেকে ৪৫ হাজারের মধ্যে হবে।’

৮ কোটি মানুষের দেশটিতে ২০১৭ সালে শিশু যৌন নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৩৫ হাজার ৮৯৬টি। তুরস্কে যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়স ১৮। ১৭ বছর বা তার কম বয়সের কেউ সম্মতি দিলেও আইন অনুযায়ী তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। তবে দেশটিতে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ হলেও ১৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করতে পারেন।

সামাজিক সমস্যা
যৌন অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। সংস্থার সদস্য হিলাল এসমার বলেন, ‘শুধু সংখ্যা নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গী থেকেও এসব ঘটনার বিশ্লেষণ দরকার। শুধু সংখ্যা নিয়ে পড়ে থাকলে শিশু অধিকার, জোর করে বিয়ে দেয়া, যৌন সম্পর্কে সম্মতি এবং বাল্যবিবাহের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা পড়বে।

তিনি আরও বলেন, শিশু গর্ভধারণের সংখ্যা কমাতে চাইলে সবার আগে শিশুদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে, শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তি নয়। সূত্র : ডয়েচে ভেলে