তেলের দাম বাড়ায় লোকসানের শঙ্কায় দেশীয় বিমান

আন্তর্জাতিক বাজারে বিগত কয়েক মাসে বিমানের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কারণে ভাড়া সমন্বয় করতে পারছে বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলো। এতে করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি এয়ারলাইন্সকেও হাঁটতে হচ্ছে লোকসানের পথে।

বাংলাদেশ প্রেট্রলিয়াম করপোরেশন থেকে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বিমানের (জেট এ-১) ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ ইউএস সেন্ট। অথচ বিগত সালের জুলাই মাসে একই ফুয়েলের দাম ছিল ৫৯ ইউএস সেন্ট। মাত্র আট মাসে দাম বেড়েছে ১৪ ইউএস সেন্ট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, বিগত আট মাসে চার দফায় বাড়ানো হয়েছে বিমানের জ্বালানি তেলের দাম। আর আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলেও অভিযোগ করছেন বিমান সংশ্লিষ্টরা।

যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় বর্তমানে প্রতি জেট এ-১ ফুয়েলের দাম ৫৫ ইউএস সেন্ট। একইভাবে মালয়েশিয়ায় ৫২.৯৮ ইউএস সেন্ট। তাদের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

বিমান বাংলাদেশের একটি সূত্র জানায়, যদি জ্বালানি তেলের দাম ১ ইউএস সেন্ট বৃদ্ধি পায়, তাতেই বিমানের বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি টাকা। সেখানে ১৪ ইউএস সেন্ট বৃদ্ধি পেলে বছর শেষে বিমানের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৪ কোটি টাকা।

এদিকে, বিগত কয়েক মাসে জ্বালানি তেলের দাম একাধিকবার বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিমান ও অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমান বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারে তেলের ভারসাম্যহীন দামের কারণে বিমান ও বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে হুমকির মুখে পড়ছে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় তুলনামূলক উচ্চমূল্য দিয়েই আমাদেরকে বাংলাদেশ থেকে এভিয়েশন ফুয়েল সংগ্রহ করতে হয়। এতে আমাদের এয়ারলাইন্সের ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে যায়। বিপরীতে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে টিকিটের মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে হয়। সবমিলে জ্বালানি খাতের উচ্চ ব্যয় এয়ারলাইন্সের সার্বিক অপরেশনাল প্রফিটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ নাফিস ইমতিয়াজ বলেন, ‘এটা অবশ্যই বিমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শুধুমাত্র ফুয়েলের পেছনে ২৩-৩১ শতাংশ ব্যয় হলে বিমান থেকে আয় করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

বিমান বাংলাদেশের সাবেক এই পরিচালক বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে বিমান থেকে লাভের মুখ দেখছে সরকার। যদি এভাবে ফুয়েলের দাম বাড়নো হয়, তাহলে বিমান বাংলাদেশ আবারও লোকসানে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বিমান বাংলাদেশেই লোকসানে পড়বে না। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোও একই হুমকির মুখোমুখি হবে।’

জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট মুনাফা অর্জন করে ৪৭ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ২৩৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিট মুনাফা অর্জন করে ৩২৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত তিন বছরে বিমান বাংলাদেশ নিট মুনাফা অর্জন করে ৬০৬ কোটি টাকা।