থানাকার প্রলেপে স্বস্তি খুঁজছে রোহিঙ্গা মেয়েরা

সূর্যের তাপ ও কীটপতঙ্গে উপদ্রব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে থানাকাগাছের বাকলের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হলুদ রঙের মিশ্রণ গালে মেখে সাজতে দেখা গেছে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মেয়েদের।

কয়েকশ বছর আগ থেকেই মিয়ানমারের নারীরা গালে থানাকার বাকলের গুঁড়ার মিশ্রণ ব্যবহার করছেন। রোহিঙ্গা মেয়েরা বলেন, নিজেদের কঠিন জীবনে স্বাভাবিকতা ফেরাতে ঐতিহ্যগত এ মিশ্রণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

১৩ বছর বয়সী কিশোরী জোহরা বেগমের ভাষায়, এই মেকআপ খুবই আমার পছন্দ। এটিই আমাদের ঐতিহ্য।

গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে হামলা চালালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে জোহরা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সে জানায়, সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণ শুরু করে এবং আমাদের হত্যায় মেতে ওঠে।

এর পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে তাকে পাঁচ দিন হাঁটতে হয়েছে। এখন সে জামতলি আশ্রয় শিবিরে পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করে।

জোহরা জানায়, আমি পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করি। সূর্যের তাপে পাহাড় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আর সেই তাপ থেকে বাঁচতেই থানাকার মিশ্রণ ব্যবহার করছি।

গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছেন।

ত্বক মসৃণ ঠাণ্ডা রাখতে, সূর্যের তাপ থেকে নিরাপদ থাকতে ও মেচেতা হওয়া থেকে রক্ষা পেতে থানাকা মিশ্রণ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা নারীরা।

৯ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু জান্নাত আরা বলেছে, কীটপতঙ্গ থেকে বাঁচতে সে থানাকা মিশ্রণ ব্যবহার করে।

বর্তমানে কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে থাকছে জান্নাত। সে জানায়, আমি মুখমণ্ডল পরিষ্কার রাখতে ও কিছু কীট আছে মুখমণ্ডলে কামড় বসায়, সেগুলো উপদ্রব থেকে সুরক্ষা পেতে থানাকা মিশ্রণ ব্যবহার করি।

মিয়ানমারের শুষ্ক মধ্যাঞ্চলে থানাকাগাছের বাকল পাওয়া যায়। কিউক পিইন নামে পাথরের পাটা দিয়ে সেই বাকলের মিশ্রণ তৈরি করা হয়।

বিভিন্নভাবে সেই মিশ্রণ মেয়েরা তাদের মুখমণ্ডলে ব্যবহার করে। তবে এশিয়ান অন্যান্য অঞ্চলে এটি চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করলেও মিয়ানমারের মেয়েরা প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করে।

ঐতিহ্যগত উপায় কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা নারীরা থানাকার বাকলের মিশ্রণ তৈরি করে। জোহরা বলল, আমি ভাত খাওয়া ছাড়া বাঁচতে পারি। কিন্তু মেকআপ ছাড়া থাকতে পারি না।