দলের সিদ্ধান্ত কতটুকু মানবেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার আশায় শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দলটির প্রায় সাড়ে চার হাজার নেতা। সে হিসেবে গড়ে প্রতিটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ১৫ জন। জানা কথা, প্রতি আসনে দলের মনোনয়ন পাবেন একজন, বাদ পড়বেন বাকিরা। বঞ্চিত হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে কতটুকু প্রস্তুত নেতারা? এ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল প্রার্থী হতে ইচ্ছুক কয়েকজন নেতার কাছে। তারা বলেছেন, দল নিশ্চয়ই ত্যাগী ও রাজপথে সক্রিয় থাকা নেতাদের মনোনয়ন দেবে। তবে বিগত ১০ বছরে যারা তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলেন না, তাদের যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে কোন্দল দেখা দেবে।

বিএনপির নীতি নির্ধারকদেরকে তৃণমূলের কাছে জনপ্রিয় ও এলাকায় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান মনোনয়ন ফরম নিতে আসা বেশ কয়েকজন নেতা। যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনীত করলে সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধানের শীষের জন্য কাজ করবেন বলেও জানান তারা।

ঢাকা-৭ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘সামনের নির্বাচন একটি সংগ্রাম। এই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মা ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করে আনবো। দল আমাকে মনোনীত করলে বাকি সবাইকে নিয়ে আমি কাজ করবো। আর যদি দল থেকে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে সেই প্রার্থীর জন্য কাজ করবো। প্রার্থী যে-ই হোক, আমার কাজ হবে ধানের শীষের জন্য।’

জামালপুর-৫ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাবেক মেয়র ওয়ারেস আলী মামুন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে যোগ্য মনে করি। আশা করি, দল বিবেচনায় রাখবে। যদি অন্য কাউকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলেও আপত্তি থাকবে না। দলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। তবে দল যেন তৃণমূলের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা বিবেচনা করে মনোনয়ন দেয়— সেই প্রত্যাশা থাকবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল। আন্দোলন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘ম্যাডামের মুক্তি আন্দোলন ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়া হলো এ নির্বাচন। আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ম্যাডামকে মুক্ত করার জন্য আমি মনোনয়ন কিনেছি।’

চূড়ান্ত মনোনয়ন যদি না পান সেক্ষেত্রে দল যাকে মনোনীত করবে, তাকে জয়ী করতে তার জন্য কাজ করবেন কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই কাজ করবো। আমি আগেই বলেছি, এ নির্বাচন ম্যাডামকে মুক্তির আন্দোলন প্রক্রিয়া। আর সেই প্রক্রিয়ায় দল আমাকে মনোনীত না করলেও যিনি মনোনয়ন পাবেন, তার পাশে থাকবো। এবারের নির্বাচন আমাদের জন্য বাঁচা-মরার নির্বাচন।’

নেত্রকোণা-৪ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন কৃষিবিদ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতা বলেন, ‘কাকে মনোনীত করবে সে সিদ্ধান্ত দলের নীতি নির্ধারকরা নেবেন। তবে প্রত্যাশা থাকবে দল যেন, যোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাতে ধানের শীষ প্রতীক বহনের জন্য মনোনীত করে।’

ভোলা সদর আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন হায়দার আলী লেলিন। তিনি বলেন, ‘আমি তরুণদের প্রতিনিধি ও এলাকার সর্বস্তরের জনগণের সমর্থন নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। দল যোগ্য মনে করলে মনোনয়ন পাবো। অন্য কাউকে দেওয়া হলেও সেটা মেনে নেবো। তবে সেটা যেন যোগ্য ও রাজপথে সক্রিয় থাকা ব্যক্তি হন। তাহলে আর কোনও বাধা থাকবে না। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, এমন কাউকে দল থেকে মনোনয়ন দিলে কোন্দল দেখা দিতে পারে। সেজন্য যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনীত করতে হবে।’

কত জন নেতা মনোনয়ন ফরম কিনে আবার তা জমা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নে শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন,‘মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। আরও কিছু সময় চলবে। ফলে কতজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তা এখনই বলা যাবে না। তবে এতটুকু বলা যায়, এপর্যন্ত সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে টোটাল হিসাব বলা যাবে।’

তিনি আরও জানান, বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন শুক্রবার। যারা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, তাদের সাক্ষাৎকার রবিবার (১৮ নভেম্বর) দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শুরু হবে। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রথমে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এরপর রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। ১৯ নভেম্বর সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের। বাকি বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের সময় পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে বিএনপি, শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) ছিল শেষদিন। প্রথম দিন বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী-১, বগুড়া-৬ এবং বগুড়া-৭ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলটির সিনিয়র প্রায় সব নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বিএনপির মনোনয়ন ফরমের দাম রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। তবে জমা দেওয়ার সময় জামানত হিসেবে প্রত্যেককে আরও ২৫ হাজার দিতে হচ্ছে।