দাদির নাকফুলে নৌকা পার

নৌকার মাঝির হাতে দাদির নাকফুল খুলে দিয়ে নদী পার হয়েছেন রোহিঙ্গা যুবক রহিমুল্লাহ। টাকার অভাবে নদী পার করে দিচ্ছিল না মাঝি। তবে নৌকা পারের বাকি টাকা ছিল না বলে বড় ভাই সাহাবুল্লাহর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে ওপারেই রেখে এসেছে এ পরিবার।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন রহিমুল্লাহ। নদী তীরে নেমেই পিঠে তুলে নেন শতবর্ষী দাদিকে। কাদা-মাটি মাড়িয়ে ডাঙায় অাসতে বেশ হাফিয়ে ওঠেন রহিমুল্লাহ। দাদিকে লুঙ্গিতে বেঁধে পিঠে নিয়ে এভাবেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন রোহিঙ্গা এই যুবক।

অারাকান রাজ্যের রাসিডং উপজেলার জোহারাং গ্রাম থেকে তিনদিন অাগে রওনা দিয়েছে রোহিঙ্গা এই পরিবারটি। বৌদ্ধ মগরা সব জ্বালিয়ে দিয়েছে। গ্রামের বহু যুবককে হত্যা করেছে বৌদ্ধ অার সেনারা মিলে। ঘর জ্বালানোর অাগে লুট করেছে সব। তরুণীদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। মগদের ছোড়া তীরের অাঘাতে মৃত্যু হয়েছে বড় ভাইয়ের অাট বছরের ছেলের। জীবন বাঁচাতে কয়েকটি গরু সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপারে এসে পৌঁছান মঙ্গলবার সকালে।

পানির দরে গরুগুলো বিক্রি করে নৌকার ভাড়ার ব্যবস্থা করেন এই যুবক। তাতেও ভাড়ার টাকা সংকুলান হয় না তাদের। পরে দাদির নাকফুল খুলে মাঝির হাতে তুলে দিলে নৌকা নদীতে ভাসান। তবে অারও টাকার অভাবে বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে সঙ্গে অানতে পারেননি। ওপারে অপেক্ষারত অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে রাত পার করবেন সাহাবুল্লাহর স্ত্রী। বাংলাদেশে এসে ভাড়ার টাকার ব্যবস্থা করে অাবার স্ত্রীকে অানতে যাবেন সাহাবুল।

বৌদ্ধদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা রহিমুল বলেন, ঈদের অাগে থেকে পালিয়ে ছিলাম। ভাবছিলাম, রক্ষা পাব। তা অার হয়নি। সব জ্বালিয়ে দিল। গ্রামের অসংখ্য যুবক হত্যা করা হলো। হত্যা করা হয়েছে অামার অাট বছরের ভাতিজাকেও। দেশ ছাড়তে অামাদের বাধ্য করা হয়েছে। বৃদ্ধ দাদিকে তো রেখে অাসতে পারি না। দাদিকে পিঠে করেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলাম।

ছেলের মৃত্যুর কথা মনে পড়ায় দুই গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল রহিমুল্লাহর ভাই সাহাবুল্লার। বলেন, ‘কোলের ধনকে এভাবে রেখে অাসতে হবে ভাবিনি। ওকে মাটি চাপাও দিতে পারিনি।’

সীমানার ওপারে রেখে অাসা স্ত্রীর কী হবে জানতে চাইলে বলেন, ‘পরিবারের অন্যদের সঙ্গে অামি না এলে দিশা থাকত না। প্রভুর নামে রেখে এসেছি। টাকা ম্যানেজ করে কাল অাবার ওপারে যাব স্ত্রীকে অানতে।’