দাবি মানলে যে ক্ষতি হবে কাতারের

কাতারের সংকট নিরসনে ১৩টি শর্ত দিয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। তবে সেই শর্তগুলোকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং বাস্তবায়ন অযোগ্য বলে জানিয়েছে দোহা। অন্যদিকে দাবি পূরণের জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন।

কাতার সরকারের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক শেখ সাইফ আল-সানি শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, এ শর্তগুলোর বিষয়ে অনেক আগে থেকেই কাতারের অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে। জঙ্গিবাদ সমর্থনের কথা বলে অবৈধভাবে আমাদের স্বার্বভৌমত্ব সংকুচিত করা হচ্ছে; আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারেও এটা হস্তক্ষেপ।

তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাস্তবসম্মত না হওয়া সত্ত্বেও প্রস্তাবের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য এগুলো বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগিরই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে বলেও জানান তিনি।

যদি দাবিগুলো কাতার মেনে নেয়, তাহলে দেশটির কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে; আসুন জেনে নেয়া যাক।

কাতারের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর দমিয়ে ফেলা
১৩টি শর্তের অন্যতম হলো কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা। কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইটে একটি বিতর্কিত খবর প্রকাশের মধ্য দিয়ে কার্যত এ সংকটের সূচনা হয়। কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আল জাজিরা সংবাদ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশটির কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রদ্রোহ উস্কে দিচ্ছে।

তারা বলছে এর মাধ্যমে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যরা তাদের মতাদর্শ তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে। ২০১৪ সালেও এই চারটি দেশ ও কাতারের মধ্যে বিতর্কের কারণ হয়েছিল আল জাজিরা।

ওই ঘটনার পর আল জাজিরা তাদের মিসরের চ্যানেল মুবাশের মিসির (লাইভ ইজিপ্ট) সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। চারটি দেশ চলতি মাসের শুরুতে আল জাজিরার ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে।

কাতার যদিও আল জাজিরা বন্ধের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি তারা দাবি মেনে নেয় তাহলে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে কাতার নিজেকে তুলে ধরার জন্য তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রটি হারাবে। কারণ অনেকেই আল জাজিরা দিয়ে কাতারকে চেনে।

তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি হটিয়ে দেয়া
একের পর এক দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন শুরু করলে তুরস্ক এগিয়ে এসেছিল দেশটির সাহায্যে। কাতারে সেনা মোতায়েন অনুমোদন করে আইন প্রণয়ন করেছিল তুরস্ক।

অথচ ১৩ টি দাবির দ্বিতীয়টি হল তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দিতে হবে কাতারকে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফিকরি ইসিক অবশ্য তা নাকচ করে দিয়েছেন। সংকটের মুহূর্তে খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য দিয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের প্রেসিডেন্টও সংকট সমাধানে বেশ আন্তরিক। দাবি মেনে নিলে কাতার তাদের বন্ধু রাষ্ট্রকেই হারাবে।

মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থনের ব্যাপার
আরব বসন্তের সময় মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থন করেছিল আল জাজিরা। তাদের সম্প্রচারিত সংবাদে তেমনটাই দেখা যায়। তবে ২০১১ সালের পর থেকে কাতার এবং তার প্রতিবেশি দেশগুলো আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিবর্তনে পরস্পরবিরোধী পক্ষকে সমর্থন করে এসেছে।

২০১৩ সালে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় কাতার ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে। তাদের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল কাতার ।

কাতারের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থার নাম প্রকাশ করে তাদেরকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছে সৌদি জোট। তবে বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে দোহা।

ইরানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা
ইরানের সঙ্গে সৌদির শত্রুতা একেবারে স্পষ্ট। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে শিয়া প্রধান এলাকা কাতিফে ইরানি সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী দলগুলোর কার্যকলাপে কাতারের মদদ দেয়ার অভিযোগ করছে সৌদি। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কাতার।

তবে কাতারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক কিন্তু যথেষ্ট গাঢ়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন শুরু করলে কাতারকে সাহায্য করার জন্য বিমানভর্তি খাবার-দাবার পাঠিয়েছে ইরান। সংকটে পাশে থাকারও আশ্বাস দিয়েছে দেশটি।

দেশগুলো কাতারকে একঘরে করে দিলে নিজেদের আকাশ কাতারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইরান। সেক্ষেত্রে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে আরেক বন্ধু রাষ্ট্রকে হারাবে কাতার।