দুই জোটে ৩০ বছরের কম বয়সী প্রার্থী ৪ জন

দেশের ২২ শতাংশ ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে হলেও এবারের সংসদ নির্বাচনে দুই প্রধান জোট ৩০ বছর বয়সের নিচের মাত্র চারজনকে প্রার্থী দিয়েছে।

আর মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বেশি ও কম বয়সী প্রার্থীর বয়সের ফারাক ৬৩ বছর।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সবচেয়ে বেশি বয়সের প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছে ৮৮ বছর।

আর সবচেয়ে কম বয়সী অর্থাৎ ২৫ বছর বয়সে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন শেরপুর-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা।

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৫ বছরের কথা বলা আছে আইনে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামার সঙ্গে যুক্ত আয়কর বিবরণীতে প্রার্থীর বয়স উল্লেখ করা হয়েছে।

এবারে দুই জোটের প্রার্থীর নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়স্কদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তারুণ্যে জোর দেয়া হয়েছে কম।

আর একদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন প্রায় এক কোটি ২৩ লাখ তরুণ ভোটার।

সে ক্ষেত্রে তরুণদের প্রার্থী করতে তেমন আগ্রহ দেখায়নি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো।

শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর মেয়ে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা রাজধানীর একটি মেডিকেল কলেজের প্রভাষক।

ঋণখেলাপিতে হযরত আলীর প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে আশঙ্কায় দল তার মেয়ে সানসিলা জেবরিনকেও বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রেখে দেয়।

তার বিপরীতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদের হুইপ আতিউর রহমান নির্বাচন করছেন। তার বয়স ৬১। এ আসনে তাকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সানসিলা বলেন, আগের নির্বাচনগুলোতে এ আসনটি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ২২ বছর পর ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছে শেরপুরের মানুষ।

তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হলে তরুণদের কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেব। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করব।

বিএনপির ৩০ বছরের কম বয়সী আরেক প্রার্থী দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের ছেলে ইরফান। পেশায় আইনজীবী ইরফান ইবনে আমান ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি।

তিনি ঢাকা-২ আসনে লড়ছেন। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আমান নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তার ছেলেকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৩০ বছরের কম বয়সী আরেক প্রার্থী টাঙ্গাইল-৮ আসনের কুঁড়ি সিদ্দিকী। তিনি ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে।

ঋণখেলাপিতে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে দলের পক্ষ থেকে কুঁড়ি সিদ্দিকীকে প্রার্থী করা হয়।

বিএনপিতে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রার্থী আছেন আটজন। ৪১ থেকে ৫০ বয়সের প্রার্থী ৫৮ জন।

বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ১০১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। ষাটোর্ধ্ব আছেন ১৩০ জন।

দলটির সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থী নীলফামারী-১ আসনের রফিকুল ইসলাম। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই ভগ্নিপতির বয়স ৮৭ বছর।

মহাজোটে ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে আরেক প্রার্থী ফরিদপুর-২ আসনের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ৮৩ বছর বয়সী সাজেদার বিপরীতে এ আসেন লড়ছেন বিএনপির প্রার্থী ৪৫ বছর বয়সী শামা ওবায়েদ।

মহাজোটের সবচেয়ে কম বয়সী প্রার্থী নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিল। ২৮ বছর বয়সী নিজাম উদ্দিন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন।

এ আসনটিতে তার বাবা আটবার নির্বাচন করে পাঁচবার জয়ী হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের আরেক তরুণ প্রার্থী বাগেরহাট-২ আসনের শেখ সারহান নাসের তন্ময়। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের ছেলে। স্নাতক পাস তন্ময়ের বয়স ৩১ বছর।

মহাজোটের আরেক তরুণ প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বয়স ৩৫। নড়াইল-২ আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তরুণ প্রার্থী কম হওয়ার মূল কারণ তারা রাজনীতিবিমুখ। এর জন্য দায়ী বয়স্করাই। হানাহানি, মারামারি, ঘৃণা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং নিশ্চিহ্নের রাজনীতির দরুণ তারা রাজনীতিতে আসতে ভয় পান।