দুদকের অবস্থা চলচ্চিত্রের মতো মুক্তির অপেক্ষায় : হাইকোর্ট

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা দুর্নীতির মামলায় দুদকের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। ব্যাংকের সাবেক জেনারেল ম্যানেজারের জামিন শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীকে হাইকোর্ট বলেছেন, আগে চলচ্চিত্র সংস্থা থেকে যেমন বলা হত ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে, তেমনি বর্তমানে আপনাদের (দুদকের) অবস্থাও, আসছে…অপেক্ষায় থাকুন। যেন মহাসমারোহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

হাইকোর্ট বলেন, দুদকের মামলা দুই বছর ধরে যেভাবে ঝুলিয়ে রেখেছেন, তাতে জড়িতদের পালানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনারা আসামিদের কাউকে ধরছেন আবার কাউকে ছাড়ছেন। এক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ করছেন।

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. সহিদুল করিমের বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

হাইকোর্ট আরও বলেন, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় আপনারা কয়জনকে গ্রেফতার করছেন, আর বাকিরা কোথায়? জবাবে আইনজীবী বলেন, কেউ কেউ বিদেশে পালিয়েছে। তবে মামলায় আসামি করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আদালতে বুধবার আসামি সেলিমের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক ও অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আলম। অন্যদিকে দুকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ অালম খান।

উভয়পক্ষের শুনানি করে আদালত ব্যাংকের সাবেক এক জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) মো. সেলিমের অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।

শুনানিকালে দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত আরও বলেন, মামলার এফআইআরে ব্যাংকের বোর্ড মেম্বারদের নাম কেন আসেনি। হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেল অথচ মামলার এফআইআরে তাদের নাম এল না।

আদালত আরও বলেন, ব্যাংকটির চেয়ারম্যানসহ তৎকালিন পরিচালনা পর্ষদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার আদেশ দেয়ার পর উচিত ছিল মামলার আইওকে বলা সবাইকে গ্রেফতার করতে। এই দুই বছরে অনেকে দেশ থেকে চলে গেছে। এগুলো দেখার বিষয় আমাদের নয়। কীভাবে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করবেন, সেটা আপনাদের বিষয়।

আদালতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, শিগগিরই বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মামলাগুলোর চার্জশিট আসবে, সেখানে সবারই নাম থাকবে।

পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, সেলিমকে তিনটি মামলায় জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনি মোট সাতটি মামলার আসামি। দু’বছর ধরে এই আসামি কারাগারে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এর মধ্যে গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখার ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা ও দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শনাক্ত করা হয়।

সঙ্গে সঙ্গে, বেসিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে আরও এক হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে আসে। সব মিলে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধান শেষে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৫৬টি মামলা করে দুদক।

তবে কোনো মামলার এজাহারে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর নাম নেই। অথচ বেসিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ শীর্ষ ১১ কর্মকর্তার ঋণ কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা উঠে আসে।