দুদকের নোটিশ আতঙ্কে আ.লীগের অনেক এমপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যদের অনেকে নতুন আতঙ্কে ভুগছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবি নোটিশ ঘিরে। দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের ডজনেরও বেশি সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তলবি নোটিশ করেছে সাংবিধানিক নজরদারি সংস্থাটি।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত ৫ এপ্রিল জাতীয় সংসদের হুইপ ও শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক, ৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমানকে তলব করে দুদক। ৩ এপ্রিল ঝালকাঠির সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে শরীয়তপুর থেকে নির্বাচিত এক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর ও বরিশালের একজন করে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলার আরো অন্তত ছয় সদস্যকে শিগগিরই দুদকে তলব করা হবে।

অন্যদিকে দুদকের তদন্ত চলমান রয়েছে সাবেক গণপূর্ত ও গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান এবং কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে।

ক্ষমতাসীন দলের আরো বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংস্থাটি সংসদ সদস্য ও একাধিক মন্ত্রীর স্বজন ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে ভূমিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদকে দুর্নীতির এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অনুসন্ধান ও অভিযুক্তদের তলব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের বার্তা দিচ্ছে। দুদকের কঠোর অবস্থানে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এদিকে একাধিক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেক এলাকার নেতাকর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়েছেন। দলীয় প্রধানের কাছেও এসব অভিযোগ পাঠানো হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদের মধ্যে আছেন- যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ মণ্ডল, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।

বিষয়টি স্বীকার করে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আতিউর রহমান বলেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, দফতর সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয়েছে।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা সরকার দুর্নীতিকে সমর্থন করে না। দুদক দলের ৬ সংসদ সদস্যকে তলব করেছে। একজনের দণ্ড হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশনা আছে, দুর্নীতি করলে দলের কোনো নেতাকর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, আমাদের দলের সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের দুদক তলব করছে, তারা যদি সদুত্তর দিতে না পারে তাহলে অবশ্যই তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ খুব সিরিয়াস।