দুদক আতঙ্কে বিএনপি : নিশানায় অর্ধশত নেতা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রয়েছেন কারাগারে। দলের নেত্রীকে কারামুক্ত করতে আন্দোলন করতে গিয়ে আটক হচ্ছেন অনেক নেতা। তারওপর নতুন আতঙ্ক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিষ্ঠানটির নিশানায় রয়েছেন বিএনপির অর্ধশত নেতা, দাতা, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী। তাদের কারোর কারোর বিরুদ্ধে পুরনো মামলা চাঙ্গা হয়েছে। কোনোটি আদালতে বিচারাধীন, কোনোটি প্রক্রিয়াধীন।

বিএনপির দাবি, আন্দোলন ঠেকাতে এবং নির্বাচন থেকে নেতাদের দূরে রাখতে এটি সরকারের একটি কৌশল। দুদক কর্মকর্তাদের বক্তব্য হলো, সংস্থাটি চলছে নিজের আইনে। দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাসীন না ক্ষমতাহীন, সেসব বিবেচনা করা হয় না।

গত ওয়ান-ইলেভেন এবং বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের হওয়া দুদকের মামলায় এরই মধ্যে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। এর আগে বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমানের ১০ বছরের সাজা হয়।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনে আছে ফৌজদারি মামলায় সর্বনিু ৩ বছর চূড়ান্তভাবে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা হারাবেন।

বিভিন্ন সময় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, আমলা, ব্যবসায়ী, বিচারকসহ অনেকের বিরুদ্ধে তথ্য অনুসন্ধান এবং মামলা করেছে দুদক। তাদের কারো বিরুদ্ধে টাকা পাচার, কারো বিরুদ্ধে করফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্তদের অনেকেই বিদেশে রয়েছেন। এর মধ্যে ২০০৭-০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া মামলার সংখ্যাই বেশি। এর কোনোটি উচ্চ আদালতে স্থগিত আছে, কোনোটির আবার বিচার চলছে। এখন রায়ের পর্যায়েও রয়েছে দু-একটি। আবার নতুন করে অনেকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুদক টিম। স্থগিত হওয়া মামলা পুনরুজ্জীবিতও করা হচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত কারো কারো সম্পদ ক্রোকের আদেশও দিয়েছেন আদালত।

বিএনপির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে এবং দুদক তদন্ত করছে তারা হলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাদেক হোসেন খোকা, বরকত উল্লাহ বুলু, একেএম মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, তৈমূর আলম খন্দকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মিজানুর রহমান মিনু, হাফিজ ইব্রাহীম, হাফিজ ইব্রাহিমের স্ত্রী মাহফুজা সুলতানা, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রী রোমানা মাহমুদ, আলী আসগার লবী, আ ন ম এহছানুল হক মিলন, কমিশনার এমএ কাইয়ূম, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, লায়ন আসলাম চৌধুরী, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মনিরুল ইসলাম সাক্কু, মনিরুজ্জামান মনি, মীর মোহাম্মদ নাসির, ড্যাব নেতা জাবেদ ইকবাল, আ ন হ আখতার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদ, কমিশনার আবুল বাশার, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন নবী খান সোহেল, তাবিথ আওয়াল, রেজাউল করিম চুন্নু (সাবেক বিচারক), মোতাহার হোসেন (তারেক রহমানকে বেকসুর খালাসদাতা বিচারক), পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম, অধ্যাপক মামুন (জাসাস), আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, মেট্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান কবির আহমেদ ভুইয়া, লা-মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমদ ভুইয়া, প্যারাগন গ্রুপের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশনের মালিক খাদিজা ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হারিছ চৌধুরী, পেশাজীবী নেতা মাহমুদুর রহমান, তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবালমান্দ বানু। এ ছাড়া বিএনপির নেতা, অর্থদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আরো অর্ধশতজনের ফাইল খোলা হয়েছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জেলে পাঠিয়ে সরকার খালি মাঠে গোল দিতে চায় বলে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দাবি। তাদের অভিযোগ, বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা, পুরনো মামলা চাঙ্গা এবং সাজা হলেও ক্ষমতাসীনদের বিষয়ে দুদক অতি কৌশলী। সংস্থাটি ক্ষমতাসীনদের দু-একজনকে তলব করছে, তবে এটা আইওয়াশ মাত্র। মামলা এখন আর বিএনপি নেতাদের জন্য আতঙ্ক নয়, সহনীয় হয়ে গেছে। কারণ একেক নেতার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা যখন সেঞ্চুরি পার করে তখন ভয় বা আতঙ্ক আর থাকে না। আর সে মামলা যদি হয় মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে তাহলে তো কথাই নেই। দুদক যদি সরকারের ফরমায়েশ পালন করে আমাদের জেলে পাঠাতে চায় তাহলে দুদককেও দোজখে যেতে হবে।

এ প্রসঙ্গে দুদকের মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, কারো রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। এটি স্বশাসিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আমাদের আইনের আওতায় চলতে হয়। এ ছাড়া কারো বিষয়ে রায় তো দেন আদালত। অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার প্রক্রিয়ায় আইনগত সব সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ পান তারা। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনার প্রশ্নটি অবান্তর।