দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনে এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি!

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে এবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি।

সোমবার দুপুরে রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেউ যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, তার জন্য আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’

পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে এ রায় দেন। আদালত জানান, রায়ের জন্য ১৫টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে রয়েছে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কি না, খালেদা জিয়া অসৎ উদ্দেশ্যে এই টাকা সংগ্রহ করেছিলেন কি না, ২০০১-২০০৬ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল কি না, তিনি ট্রাস্টের সদস্য কি না, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তারেক রহমানের চাচিশাশুড়ির কাছ থেকে ৪২ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়েছিল কি না ইত্যাদি।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে ওই দিন বিকেলে (৮ ফেব্রুয়ারি) নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় আজ রায়ের সময় কারাগারে হাজির ছিলেন না।

এই মামলার অন্য তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। বাকি দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত আজ এই তিনজনকেও অভিন্ন সাজা দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ।